ইট, কাঠ বা সিমেন্টের বাড়িতে নয়, বরং বিমানের ভেতরে ঘরসংসার। তাতেই হাত-পা ছড়িয়ে দিনের পর দিন কাটাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের জো অ্যান ইউসেরি। আগুনের গ্রাসে নিজের ঘরবাড়ি হারিয়ে তড়িঘড়ি করে একটি পুরোনো বোয়িং ৭২৭ কিনে ফেলেন তিনি। সেখানেই নতুন করে সাজাতে থাকেন সংসার।
পেশায় মেকআপশিল্পী ইউসেরির বোয়িং বিমানে ঘরসংসার পাতার ভাবনাটা মাথায় ঢুকিয়েছিলেন তার শ্যালক। পেশায় যিনি ছিলেন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার। ভাঙাচোরা পুরোনো জিনিসপত্র, ফেলে দেওয়া লোহার ছাঁটের সঙ্গে বোয়িং বিমানটিরও সদ্গতি হওয়ার কথা ছিল। তবে ভাগাড়ে ফেলে দেওয়ার আগে সেটিকে কিনে নেন জো।
মিসিসিপির বেনোয়া শহরে নিজের এক টুকরো জমি ছিল জোয়ের। পুরোনো বিমানটি কিনে সেটিকে সেখানেই নিয়ে যান তিনি। মাস ছয়েক ধরে বিমানটির চারপাশ থেকে শুরু করে ভেতরের বেশিরভাগ মেরামতিও করেন নিজের হাতে। এরপর সেটিকে বাসযোগ্য করে তোলেন তিনি। মাস ছয়েক পরে পুরোনো বিমানটির যেন নবজন্ম হয়েছিল। সাজানো-গোছানো বিমানের ভেতরে ছিল দেড় হাজার বর্গফুটের বিশাল ড্রয়িং রুম, তিনটা বেড রুম আর দুটি বাথরুম। বিমানের ককপিটের জায়গায় একখানা বাথটাবও রেখেছিলেন জো।
বিমানের রূপ পাল্টাতে সব মিলিয়ে তখন জোয়ের খরচ হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার ডলার। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ওই বিমানে বসবাস করেছিলেন জো। বিমানটিকে ট্র্যাকে করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় তা এমনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে সেটির আর মেরামত করা যায়নি। ফলে তার পর থেকে বিমানে বসবাসের চিন্তা ছাড়তে হয়েছিল জো অ্যান ইউসেরিকে।
জোয়ের এই জীবনযাত্রার খবর অনেককে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। তেমনই একজন হলেন ব্রুস ক্যাম্পবেল। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে একটি রেডিও অনুষ্ঠানে জোয়ের কথা জানতে পেরেছিলেন ব্রুস। পেশায় ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ব্রুসের ব্যক্তিগত বিমানচালনার লাইসেন্স রয়েছে। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘একবার রেডিও শুনতে শুনতে গাড়ি চালিয়ে নিজের বাড়ি ফিরছিলাম। রেডিওতে জো অ্যানকে নিয়ে অনুষ্ঠান হচ্ছিল। তা শুনে মনে হয়েছিল, কী অসাধারণ কাহিনি! পরদিন থেকেই ওইভাবে বিমানে থাকব বলে চেষ্টা শুরু করেছিলাম।’ এখন যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগনের হিলসবোরোর জঙ্গলে নিজস্ব বোয়িং ৭২৭ বিমানের ভেতরেই থাকেন ব্রুস। তিনি জানিয়েছেন, এভাবে বসবাসের কথা চিন্তাভাবনার জন্য তিনি জোয়ের কাছে কৃতজ্ঞ।
সংবাদ সূত্রঃ সিএনএন