বেহেশতের লোভে এ কী পরিণতি!

মগজ ধোলাই যাকে বলে। মুসলিম তরুণদের বেহেশত পাওয়ার লোভ দেখিয়ে দলে ভিড়িয়েছিল জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। নামিয়েছিল রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে, যার মাধ্যমে মিলবে বেহেশত। ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের সেই কথিত খেলাফত এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। যুদ্ধের ময়দানে আইএসের বহু জঙ্গি লাশ হয়েছে। মৃত্যুর পর তাদের কবরটুকুও জুটছে না।

ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার উত্তরে দুলুইয়া শহরটি অবস্থিত। সম্প্রতি এই শহরে আইএসের জঙ্গিদের করুণ পরিণতি চোখে পড়ে। শহরের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিদের লাশ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায়। লাশ ঘিরে ছিল মাছিদের ভনভনানি। অদূরে অপেক্ষারত কুকুরের চোখে ছিল লোভাতুর দৃষ্টি।

পরে আইএসের নিহত জঙ্গিদের গণকবরে মাটিচাপা দেয় দুলুইয়ার লোকজন। নিহত জঙ্গিদের প্রতি শহরটির অধিবাসীদের সামান্যতম টান কাজ করেনি। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় পুলিশের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল জুবুরি বলেন, ‘ভালোবাসা নয়, বরং রোগব্যাধি থেকে বাঁচতে তাদের (জঙ্গিদের) মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।’

একসময় ইরাক ও সিরিয়ার একটা বড় ভূখণ্ড নিজেদের দখলে নিয়েছিল আইএস। তারা তাদের দখলকৃত এলাকায় লোমহর্ষক নৃশংসতার মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। তারা বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছিল। অবস্থাদৃষ্টে আইএসকে অপ্রতিরোধ্য মনে হচ্ছিল।

পরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় বাহিনীর অভিযানে ধীরে ধীরে আইএস তাদের ভূখণ্ড হারাতে থাকে। আজ তাদের ‘খেলাফত’ খানখান।

২০১৪ সাল থেকে ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক জোট। এই জোটের হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার আইএস জঙ্গি নিহত হয়েছে। রাশিয়া ও সিরিয়া বাহিনীর হামলায়ও বহু আইএস জঙ্গি নিহত হয়েছে। সব মিলিয়ে আইএসের নিহত জঙ্গিদের সংখ্যাটা কম নয়।

টাইগ্রিস নদীর তীরবর্তী দুলুইয়ায় সম্প্রতি তুমুল লড়াইয়ের পর আইএসের পতন হয়। যুদ্ধ শেষে এখানে-সেখানে জঙ্গিদের লাশ পড়ে থাকে। এই লাশ নিয়ে বিপাকে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা। এক পুলিশ সদস্যের ভাষ্য, তাঁরা জঙ্গিদের লাশ নদীতে ফেলে দিতে পারতেন। কিন্তু টাইগ্রিসকে তাঁরা খুবই ভালোবাসেন। এই নদীর পানিতে সবার প্রাণ বাঁচে। তাই জঙ্গিদের লাশ ফেলে তাঁরা প্রিয় নদীটিকে দূষিত করতে চাননি।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গণকবর খোঁড়ার সিদ্ধান্ত নেয় দুলুইয়ার বাসিন্দারা। সেখানেই আইএসের নিহত জঙ্গিদের মাটিচাপা দেওয়া হয়।

দুলুইয়ার কৃষক শাহলান আল জুবুরি। আইএসের অত্যাচারে দুলুইয়ার অধিবাসীরা যে কতটা ত্যক্ত-বিরক্ত, তা বোঝা যায় শাহলানের কথায়। তিনি বলেন, তারা (জঙ্গি) স্বর্গে যাবে—এমনটা বলেছিল। কিন্তু তাদের কী করুণ পরিণতিই না হলো!

ইরাকের মসুলেও আইএসের জঙ্গিদের একই পরিণতি দেখা যায়। মসুল আইএসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। গত জুলাইয়ে মসুলে আইএসের পতন হয়। ওই সময় এক ইরাকি কমান্ডার জানান, আইএসের নিহত জঙ্গিদের লাশ দাফনে তাঁরা মাটি সরানোর যন্ত্র ব্যবহার করেছেন।

ইরাকের মতো সিরিয়ায়ও আইএস জঙ্গিদের করুণ পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে। সিরিয়া সীমান্তে প্রায় ৫০ হাজার আইএস জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। নিহত এই জঙ্গিদের শেষ পরিণতি স্পষ্ট হয় সিরিয়ার এক কমান্ডারের কথায়। তাঁর ভাষ্য, আইএসের নিহত সদস্যদের লাশের কী হবে, তা তাঁদের চিন্তার বিষয় নয়।

সিরিয়ায় সরকারপন্থী এক মিলিশিয়ার ভাষ্য ছিল এমন—আইএসের জঙ্গিদের লাশ মরুভূমিতে পড়ে থাকছে। মরুভূমির কুকুরেরা অপেক্ষায় আছে।

বাংলাদেশ সময় : ১৩০৫ ঘণ্টা, ২২ অক্টোবর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এ

Scroll to Top