১৯ বছর আগে দুই জমজ বোন অতুন হক অর্থী ও অবনী হক অর্পা মা-বাবার কোলে আলো করে জন্ম নেয় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। জমজ দুই বোনের মধ্যে রয়েছে অনেক বিস্ময়কর মিল। তারা দুই বোন এবারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে একই নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় নয়, স্কুল জীবনেও এমন সফলতা রয়েছে তাদের। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমিনুল হক ও সরকারি চাকরিজীবী লাভলী ইয়াসমিন দম্পতির ঘর আলো করে জন্ম নেয় জমজ সন্তান অর্পা ও অর্থী।
ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত তারা পড়ালেখা করেছে সিরাজগঞ্জের দক্ষিণ পুস্তিগাছা বনানী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। নবম শ্রেণিতে দু’জনেই ভর্তি হয় সিরাজগঞ্জের সবুজ কানন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। অর্থী-অর্পা মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেয় ২০১৮ সালে। ফলপ্রকাশের পর জানা গেল, দু’জনের জিপিএ একই ৪.৯৪। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকেও একই বিন্দুতে অর্পা-অর্থী।
এরপর তারা ভর্তি হন সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিকেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দুই জনেই পেয়েছেন জিপিএ ৫। এখানেই কাকতালের শেষ নয়। উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পথে আরও কাকতালের জন্ম দিয়েছেন দুই বোন। মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী দুই বোন গত ২ অক্টোবর বসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষায়। ভর্তি পরীক্ষায় দুই জন দুই ভবন থেকে পরীক্ষা দিলেও পেয়েছেন একই নম্বর।
ঠিক একমাস পর ২ নভেম্বর প্রকাশ পায় ভর্তি পরীক্ষার ফল। তাতেও বিস্ময়, দুই বোনেরই স্কোর ৫৩! এসএসসি-এইচএসসির রেজাল্ট একই হওয়ায় এই ইউনিটে দুই জনেরই মোট স্কোর ৭২.৮৮।
অতুন হক অর্থীর বলেন, এই অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নয়। সবসময় পরপর সিরিয়াল থাকত আমাদের। অর্পা ফার্স্ট হলে আমি সেকেন্ড হতাম, আমি ফার্স্ট হলে অর্পা সেকেন্ড হতো। ক্লাস ফোরে আমি ফার্স্ট ছিলাম। ফাইভে ওঠার সময় এক নম্বরের ব্যবধানে অর্পা ফার্স্ট হয়, আমি হই সেকেন্ড।
আরেক বোন অবনী হক অর্পা বলেন, আমি খুব আনন্দিত। আমরা সবসময় একসঙ্গে পড়ালেখা করেছি। আমাদের লক্ষ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একই স্কোর, একই পজিশন নিয়ে একই বিভাগের ভর্তির সুযোগ সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে মিরাকল ছাড়া আর কীই বা বলতে পারি! তবে এমন ঘটনা আমাদের জন্য সত্যিই অনেক আনন্দদায়ক। অনেক বড় পাওয়া। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
অর্পা ও অর্থির বাবা দক্ষিণ পুস্তিগাছা বনানী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম আমিনুল হক স্বপন গণমাধ্যমকে বলেন, আমার এই দুই মেয়ে ছাড়া আর কোনো সন্তান নেই। তাদের আমি মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা করছি। ওরা সবক্ষেত্রেই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে, এটাই আমার কাছে বড় পাওয়া।