এই রহস্যময় পৃথিবীতে এমন অনেক কিছু ঘটে যা স্বাভাবিক ভাবে বিশ্বাস করতে চায় না মন। এমনই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে ব্রিটেনের কর্নওয়েলের এক বাসিন্দা ডেভিড মরিসের সঙ্গে। সমুদ্রের ঠিক ওপরে বিশাল একটি জাহাজকে শূন্যে ভেসে থাকতে দেখেন তার চোখে। তিনি এই দৃশ্য বিশ্বাস করতে পারেননি।
যদিও কর্নওয়ালের ফালমাউথ অঞ্চলের এই বাসিন্দা বিরল এই দৃশ্যটি ধারণ করতে সময় নেননি একটুও। সঙ্গে সঙ্গেই ক্যামেরায় বন্দি করেন হাওয়ায়া ভেসে থাকা জাহাজটিকে।
আদৌ কি জাহাজটি আকাশে ভাসছিল? আদতে না। ডেভিডের চোখকে ধোঁকা না দিয়েছে বিরল আবহাওয়া। যার ফলে অপটিক্যাল ইল্যুশন বা দৃষ্টি বিভ্রমের সৃষ্টি হয়েছে।
বিষয়টি আর কিছুই নয়, বিজ্ঞান। এটি দৃষ্টিবিভ্রমের একটি উদাহরণ যা মরীচিকা (সুপিরিয়র মিরেজ) হিসেবে আমাদের কাছে পরিচিত। এ ধরনের বিভ্রম আর্কটিক অঞ্চলে প্রায়ই ঘটার সম্ভাবনা থাকলেও যুক্তরাজ্যে কমই ঘটে থাকে। তবে যদি বায়ুমণ্ডলের পরিস্থিতি ঠিক থাকে, তবে ব্রিটেনের শীতেও এই বিরল মরীচিকা প্রত্যক্ষ করতে পারে লোকে। যেমনটি মরিসের সাথে হলো।
কী করে ঘটে এই সুপিরিয়র মিরেজ?
এ ধরনের দৃষ্টিবিভ্রম মূলত আবহাওয়াগত কারণে ঘটে যাকে বিজ্ঞানীরা তাপমাত্রা বিপর্যয় (টেম্পারেচার ইনভারশন) হিসেবে অভিহিত করেছেন। সাধারণত উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে বায়ুর তাপমাত্রা ক্রমশ হ্রাস পায় যা পর্বতশৃঙ্গগুলোকে তাদের পাদদেশের চেয়ে শীতলতর করে তোলে।
কিন্তু যখন টেম্পারেচার ইনভারশন দশা ঘটে, তখন উষ্ণ বায়ু শীতলতর বায়ুর ওপর থাকে। ফলে বায়ুমণ্ডলের স্তরে যে পরিবর্তন সাধিত হয় তাতে আমাদের দেখতে পাবার ক্ষমতায় বিপর্যয় নেমে আসে। কর্নওয়ালে দৃষ্টি বিপর্যয়ের কারণও এটি। শীতল সমুদ্রের ওপর ঠান্ডা বাতাস বইছিল, তার ওপরের স্তরে আবার ছিল উষ্ণ বায়ুপ্রবাহ।
বিবিসির আবহাওয়াবিদ ডেভিড ব্রাইনও একই মত দিয়েছেন।
যেহেতু ঠান্ডা বাতাস উষ্ণ বাতাসের চেয়ে ঘন, তাই এটি স্থল বা উপকূলে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির চোখের দিকে আলোর প্রবেশপথ বাঁকিয়ে দেয়, ফলস্বরূপ অনেক দূরবর্তী বস্তু ভিন্নভাবে নজরে আসে।
‘সুপিরিয়র মিরেজগুলো বিভিন্ন ধরণের চিত্র তৈরি করতে পারে- এখানে একটি দূরবর্তী জাহাজকে তার আসল অবস্থানের থেকে ওপরে উঁচুতে ভাসতে দেখা যায়, তবে কখনও কখনও দিগন্তসীমার নিচের কোনো বস্তুও দৃশ্যমান হতে পারে’, বলেন ডেভিড।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সময় আলোকচিত্রীরা মাটি থেকে বিভিন্ন অবস্থানে বায়ুতে ভেসে থাকা জাহাজ, ইয়ট এবং অন্যান্য সামুদ্রিক যানের ছবি তুলেছেন; এসব অনিন্দ্যসুন্দর ছবির কৃতিত্ব কিন্তু সুপিরিয়র মিরেজেরই।
আরেকটি পরিচিত দৃষ্টিবিভ্রমের উদাহরণ হলো ‘ইনফেরিয়র মিরেজ’, নামেই বোঝা যাচ্ছে এটি পূর্বেরটির বিপরীত। এ ধরনের মরীচিকা প্রধানত মরুভূমির বুকে মরুদ্যান কিংবা প্রচণ্ড গরমে পীচঢালা রাস্তা যে মাঝেমাঝে ভেজা দেখতে পাওয়া যায় তেমন বিভ্রমের জন্ম দেয়। এ ক্ষেত্রে শীতল বায়ু উষ্ণ বায়ুর স্তরের ওপর চেপে বসে।
: বিবিসি