বর্তমানে নিউইর্য়কের করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখের ও বেশি- মৃত্যুর সংখ্যা ২৬ হাজার অতিক্রম করেছে। সারা যুক্তরাষ্ট্রের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সেই কবে এক মিলিয়ন অতিক্রম করেছে- এবং মৃতের সংখ্যা ৭৮ হাজার ৫৯৯। নিউইর্য়কে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার কথা নিশ্চয় পাঠকের মনে আছে। সে হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ২ হাজার ৯৭৭ জনের। ইতিমধ্যে করোনাভাইরাস ৯/১১ হামলার চেয়ে নয়-গুন বেশি মানুষের প্রাণ নিউইর্য়কে কেড়ে নিয়েছে। আর এই লাশের প্রত্যক্ষ সাক্ষী নিউইয়র্কের হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীরা। দিনের পর দিন তারা লাশের অতিরিক্ত বোঝা বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মাত্রারিক্ত লাশের বোঝা আর কতইবা সহ্য করা যায়।
তাই বুঝি নিউইয়র্ক প্রেসবেটারিয়ান হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক লরনা ব্রিন (৫৯) ও এস্টোরিয়া এলাকায় ইমার্জেন্সি সার্ভিসে কর্মরত প্যারামেডিক জন মনডেলো (২৩) সম্প্রতি আত্মহত্যা করেছেন। জানা যায়- এরা করোনাভাইরাসের লাশের বোঝা সেই শুরু থেকেই বইছে। দিন পরের দিন একের পর এক মানুষের মৃত্যুর সাক্ষী হয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন।
এত লাশ যে তারা জীবনেও দেখেনি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ছোট বড় সবাই একসাথে মারা যাচ্ছে। গতকালকে নিউইর্য়কের পাঁচ বছরের এক শিশু করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এত লাশের বোঝাতো স্বয়ং যমরাজের সহ্য হচ্ছে কিনা তা সন্দেহাতীত। আরা ব্রিন এবং মনডোলা তো মাত্র মানুষের সন্তান। তাই বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা করেছেন তাঁরা। লাশের বোঝা হতে মুক্তি অবশেষে তাঁরা পেয়েছেন।
নিউইর্য়কের করোনার একজন সম্মুখভাগের যোদ্ধা হিসেবে বলছি আপনি যদি নিউইর্য়কে লাশের সংখ্যা কত তা যদি জানতে চান তাহলে আপনাকে ইন্টারনেটে বেশিক্ষণ গবেষণা করতে হবে না। আপনার নিকটস্থ বাণিজ্যিক ফিউনারেল হোমের আশেপাশে একটু লক্ষ্য করলেই হবে। নিউইর্য়কে প্রায় সব মর্গ এখন লাশে পরিপূর্ণ। নিউইর্য়কের বিভিন্ন রাস্তার পাশে পার্ক করা সারি সারি ফ্রিজের ট্রাকগুলোতেও লাশে ভর্তি। তারপরও লাশ রাখার জায়গা হচ্ছে না।
তাই নিউইর্য়কে লাশ ফ্রিজবিহীন খালি ট্রাকের মধ্যে জ্বালানির কাঠের টুকরার মত করে রাখা হচ্ছে। ফ্রিজযুক্ত ট্রাকের যে বড়ই অভাব! তাই ফ্রিজবিহীন খালি ট্রাকের মধ্যে লাশ রাখা ছাড়া যে উপায় নাই। এতে লাশের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে যাচ্ছে নিউইর্য়কের আকাশে বাতাসে। কিছুদিন আগে নিউইর্য়কের ব্রুকলিনের এণ্ড্রু ক্লেকলি ফিউনারেল হোমের সামনে প্রায় একশোরও বেশি লাশ বিল্ডিংয়ের মেঝেতে বা ফ্রিজবিহীন ইউ-হল ট্রাকে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
আশেপাশের মানুষ লাশের দুর্গন্ধে থাকতে পারছে না। তাই তারা অতিষ্ঠ হয়ে পুলিশকে ফোন দেয়। জন ডিপিট্রো নিউইর্য়ক পোস্টকে জানায়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে লাশগুলোকে এভাবে পড়ে থাকতে দেখছি। মৃতের এভাবে সম্মান করা হয় না। এই মৃতের মধ্যে আমার বাবা বা ভাইও থাকতে পারত!
পুলিশ এসে এই ঘটনা বর্তমানে তদন্ত করছে-কিন্তু আসলে পুলিশই বা এখানে কি করবে? তারাও জানে ফিউনারেল হোমে এত লাশ রাখার জায়গা যে এখন নেই। এত লাশ তারা রাখবে কোথায়?
লেখক: নিউ ইয়র্ক পুলিশের কর্মকর্তা