কোভিড-১৯ঃ মৃত্যুর আগে তরুণের শেষ বার্তা, কাঁদল বিশ্ববাসী

মহামারী করোনাভাইরাস আতঙ্কে আতঙ্কিত গোটা বিশ্ব। মারণ এই ভাইরাসের সংক্রমণে বিশ্বজুড়ে বেড়েই চলছে মৃতের সংখ্যা। এই ভাইরাসের ধ্বংসযজ্ঞে সবচেয়ে বেশি বিধ্বস্ত বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্র আমেরিকা। গত দু\’মাসে এই দেশটিতে মারা গেছেন ৫৫ হাজারের বেশি মানুষ। আমেরিকার কয়েকটি শহর যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা নিউইয়র্কের।

৩২ বছর বয়সী জন কোয়েলহো সম্প্রতি মারা গেছেন করোনা সংক্রমণে। নিউইয়র্কের হাসপাতালে মারা যাওয়ার আগে নিজের স্ত্রী ও সন্তানের জন্য লিখেছিলেন শেষ চিঠি, যা সম্প্রতি সামনে এসেছে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। সেটি পড়েই চোখে পানি এসে গেছে নেটিজেনদের। আবেগঘন মনে সকলে প্রশংসা জানাচ্ছেন ওই যুবককে।

সেই শেষ চিঠিতে জন লিখেছেন, তিনি গর্বিত একজন স্বামী হিসেবে। তিনি গর্বিত তার সন্তানদের পিতা হিসেবে। তার স্ত্রী তার দেখা দুনিয়ায় সবচেয়ে সুন্দর মানুষ আর সবচেয়ে সুন্দর মা। আগামী জীবনে তারা সকলেই প্রাণ খুলে নিজেদের খুশিমতো বাঁচুক, এটাই তার শেষ চাওয়া।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত জন কোয়েলহোকে গত মাসে স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রথমে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু জনের আগে থেকেই হার্টের সমস্যা ছিল। করোনা সংক্রমণের ফলে সেটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জীবনে। পরে নিউইয়র্কের বড় হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শেষ রক্ষা হয়নি। কম বয়সেই হারিয়ে যায় একটি প্রাণ। জনের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার স্ত্রী কেটি হাসপাতালে গিয়েছিলেন স্বামীর মরদেহ নিতে, জিনিসপত্র ফিরিয়ে আনতে। তখনই হাতে আসে জনের ফোনটি। সেখানেই তিনি খুঁজে পান স্বামীর শেষ বার্তা।

অনেক ছোট বয়স থেকে প্রেম শুরু হয়েছিল জন আর কেটির। পরে সেই প্রেম থেকে গাঁটছড়া বাঁধা। অনেক ঝড়ঝঞ্ঝা এসেছে জীবনে, তবুও সম্পর্কে তার প্রভাব পড়েনি। কেটির গর্ভধারণের সমস্যা থাকায় আইভিএফের মাধ্যমে ছোট দু\’টি সন্তানও হয় তাদের। আড়াই বছরের ব্র্যাডিন এবং ১০ মাসের পেনেলোপ।

কেটি জানান, করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সমস্ত রকম সাবধানতা নিয়েছিলেন তারা। জনকে কাজের সূত্রে বাইরে যেতেই হতো, কিন্তু জন সব সময় মাস্ক, গ্লাভস ব্যবহার করতেন।

মার্চের শেষদিকে কর্মসূত্রেই জন একজন করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসেন। তারপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। খুব ক্লান্তি আসে তার, শুরু হয় মাথার যন্ত্রণা। ধরা পড়ে করোনা। সঙ্গে সঙ্গে আইসোলেশনে পাঠিয়ে চিকিৎসা শুরু হয় তার। শুরুর দিকে বেশ খানিকটা সাড়া দিলেও পরে অবস্থা খারাপ হয়ে ওঠে। শুরু হয় চূড়ান্ত শ্বাসকষ্ট। আনা হয় নিউইয়র্কে, ব্যবস্থা করা হয়েছিল ভেন্টিলেটরেরও। তবু শেষ রক্ষা হল না। চিকিৎসকরা মনে করছেন, হৃদরোগ থাকার কারণেই লড়াইটা জিততে পারলেন না জন।

স্থানীয় আদালতে ছোটখাটো একটি কাজ করতেন জন। একজন ভালো বাবা ও স্বামী হিসেবে রীতিমতো খ্যাতি ছিল জনের। বুক চিতিয়ে নিজের ভালোবাসার কথা সকলকে বলতে ভালোবাসতেন জন। সেই প্রেমের কথাই লিখে গেলেন শেষ বার্তাতেও। আর তার শেষ বার্তা পড়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না নেটিজেনরা। ফেসবুকে একজন লেখেন, জনের এই লেখাটি পড়ে চোখ ভিজে গেল।
: দ্য ওয়াল

Scroll to Top