করোনা পরিস্থিতিতে ঝামেলায় পড়েছে অনেক অসহায় পরিবার। স্বামী মানিক দিনমজুর, মাটি কেটে অথবা রিকশা চালিয়ে দিন এনে দিন খেয়ে সংসার কোনো মতে চালাতেন। কিন্ত প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে সেই স্বামী পুরোপুরিভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েন। এই মহামারির ভেতর দু’দিন না খেতে পেয়ে শেষ পর্যন্ত মাথার চুল বিক্রির করে সন্তানের জন্য দুধ ও দুই কেজি চাল কিনে আনলেন অসহায় এক মা সাথী বেগম।
অভাবের কারণে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ থেকে চার মাস আগে স্ত্রী সাথী বেগম ও দুই সন্তান নিয়ে রাজধানীর মিরপুরে আসেন দিনমজুর মানিক। পরে সেখান থেকে এক মাস আগে সাভারের ব্যাংক কলোনি এলাকায় নান্নু মিয়ার একটি টিনশেড ঘর ভাড়া নেন তারা। কিন্তু করোনার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়ায় গত দু’দিন ধরে ঘরে তাদের আঠারো মাস বয়সের সন্তানের দুধসহ কোনো খাবারই নেই।
তাই ত্রাণের সন্ধানে অনেকের কাছে গেলেও কোথাও পাননি সহায়তা। অবশেষে সোমবার (২০ এপ্রিল) বিকেলে রাস্তায় সাথী বেগমের সঙ্গে পরিচয় হয় এক হকারের (চুল ক্রেতা)। তখন মাথার চুল দেখিয়ে বিক্রি করলে কত টাকা পাবেন জানতে চান তিনি। হকার জানান- ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দেবেন। কিন্তু মাথার চুল কেটে দেওয়ার পর তার হাতে মাত্র ১৮০ টাকা ধরিয়ে দিয়ে চলে যান হকার।
মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) বিকেলে কথাগুলো বলছিলেন সাভার পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা অসহায় মা সাথী বেগম।
দুই সন্তানের মা সাথী বলেন, আমরা সাভারে নতুন আসছি। আমি বাড়ি বাড়ি কাজ করি ও আমার স্বামী মাঝে মধ্যে রিকশা চালায় আবার মাটিও কাটে। করোনার কারণে আমাদের দুই জনেরই কাজ বন্ধ হয়ে গেছে কয়েদিন ধরে। ঘরে যে টাকা ছিল তা দিয়ে কয়দিন চলছি। কিন্তু দুইদিন ধরে তাও শেষ হয়ে যাওয়া না খেয়ে ছিলাম পোলাপান নিয়া। পরে ত্রাণের জন্য অনেকের কাছে গেলেও কেউ সহায়তা করে নাই। তাই উপায় না পাইয়া হকারের কাছে ১৮০ টাকার চুল বিক্রি করে ছেলেটার জন্য দুধ আর আমাদের জন্য দুই কেজি চাল কিনছি।
কেন চুল বিক্রি করলেন? খাবারে জন্য কি কাউকে বলেছিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এখানে নতুন আসার কারণে তেমন কারও সঙ্গে তাদের পরিচয় নেই। কয়েক জায়গায় গেছেন কিন্তু কোথাও সাহায্য পাননি।
বিষয়টি সাভার উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মাহফুজকে জানালে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে নগদ ছয় হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য এবং ১৫ দিনের খাদ্যসামগ্রী উপহার দেন।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে খাবারসহ আর্থিক সহয়তা দেওয়া হয়েছে।