২০০৭ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর। লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল দেশের দক্ষিণ উপকূলীয় জনপদ। এর আঘাতে নিশ্চিহ্ন হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। গৃহহারা হয়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। সমুদ্রে মাছ ধরারত বহু জেলের আর স্বজনদের কাছে ফেরা হয়নি। ১২ বছর আগে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ৭ জন লোক নিহত হয়, আহত হয় শতাধিক লোক।
দুবলারচর ও আলোরকোল নামক স্থানে মাছ ধরতে গিয়ে নিহত হয় তালা উপজেলার মালোপাড়ার গৌর হালদার (৪৮), অজিত হালদার (৪৩) এবং বাউখোলা গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ বিশ্বাস (৫৮)।
এছাড়া উপজেলার জাতপুর গ্রামের নূর বেগম (৬০), জালালপুরের ফেলি বিবি (৫৮), টিকারামপুর গ্রামের হাসান গাজী (৫০) এবং মাগুরা বাজারে অজ্ঞাত ব্যক্তি (২৫)। নিহত পরিবারগুলোর অনেকেই না খেয়ে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে কোন মতে দিন কাটাচ্ছে। তাদের খোঁজ এখন কেউ রাখে না। পরিবারগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
সিডরে নিহত তালা সদরের মালোপাড়া অজিত হালদারের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী রিতা হালদার জানায়, ‘এই দিনে দানব সিডর তার সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অজিত হালদারকে কেড়ে নেয়। ঐ সময় সরকারি ও বেসরকারিভাবে নগদ টাকা এবং সাহায্য পেলেও এখন তাদের খোঁজ-খবর কেউ নেয় না। দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তিন বেলা দুমুঠো ভাতও জোটেনা। বর্তমানে আমি গ্রামে গ্রামে ফেরি করে মাছ বিক্রির পাশাপাশি অন্যের বাসায় ঝিয়ের কাজ করে কোন মতে সংসার চালাচ্ছি।
আমার বৃদ্ধা মা উর্মিলা অসুস্থ হয়ে বিনা চিকিৎসায় বাড়িতে পড়ে আছে। একমাত্র মেয়ে সুপ্রিয়া হালদারকে কোন মতে পাত্রস্থ করলেও সংসার চালাতে সে স্বামীর সাথে দিন মজুরের কাজ করে। বড় ছেলে কলেজে পড়ুয়া বিপ্লব হালদারের পড়াশুনার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে সে সাগরে মাছ ধরতে গেছে।
প্রায় ১২ বছরের শিশুপুত্র কৃষ্ণ হালদারকে টাকার কারণে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সে বর্তমানে প্রাইমারী স্কুলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। এছাড়া আমার স্বামীর রেখে যাওয়া ২০ হাজার টাকা ঋণের বোঝার পাশাপাশি বর্তমানে ৪/৫ টা এনজিও থেকে নেয়া ঋণের কিস্তি শোধ করতে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে। এখন আমাদের খোঁজ কেউ নেয় না!