আত্রাই নদীর বাঁধ থেকে বালু উত্তোলন, হুমকিতে শতাধিক গ্রাম

নওগাঁর মহাদেবপুরে আত্রাই নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। নদীতে শক্তিশালী মেশিন বসিয়ে বাঁধের নিচ থেকে বালু টেনে তোলায় হুমকিতে পড়েছে নদী সুরক্ষা বাঁধ ও ফসলি জমি।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছে, নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করছে না বালু ব্যবসায়ীরা। এসবের প্রতিবাদ করলে উল্টো তাদেরকে মারধরসহ নানা ভাবে হয়রানি করার অভিযোগ করছে স্থানীয় বাসিন্দারা। প্রতিকার চেয়ে এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ প্রশাসনে লিখিত আবেদন করেছে। প্রশাসনের পুরনো আশ্বাস নীতিমালা না মানলে ব্যবস্থা নেয়া।

নদীর বুক চিরে বসেছে শক্তিশালী ড্রেজার মেশিন। তোলা হচ্ছে বালু। নদী সুরক্ষা বাঁধ আর ফসলী জমির নিচ থেকে বালু টেনে আনছে এসব মেশিন। এক সঙ্গে একাধিক মেশিনের বালু তোলার এ প্রতিযোগিতায় ধ্বসে পড়ছে নদী সুরক্ষা তীর নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। নওগাঁর মহাদেবপুরের আত্রাই নদীর একাধিক পয়েন্ট থেকে বিরামহীন চলছে বালু তোলার এ কর্মযজ্ঞ। নদী থেকে বেপরোয়া মাটি ও বালির এ বাণিজ্যের প্রতিবাদে স্থানীয় প্রশাসনে একাধিক অভিযোগের দেয়ার সঙ্গে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে ক্ষতিগ্রস্তরা।

বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে বলা হয়েছে, নদীর বাঁধ অথবা ফসলি জমি থেকে বালি ও মাটি কেটে তোলা যাবে না। কিন্তু এসব আইনের তোয়াক্কা না করে নদীতে অসংখ্য ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বাঁধের একেবারে তীর ঘেঁষে মাটি কেটে তোলায় আবাসিক এলাকা ও বাঁধ হুমকির মধ্যে পড়ার কথা বলছে ভুক্তভুগীরা।

মহাদেবপুর শেরপুর গ্রামের প্রবীণ এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার ৪ বিঘা জমি ছিল নদীর ধারে এখনমাত্র ১০ কাটার মতো রয়েছে।’

অপরজন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লোকজন এসব বালু উত্তোলন করতো। এখন আবার বিএনপির লোকজন নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা নদীর বাঁধ কেটে নষ্ট করছে। এলাকায় ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । এসবের প্রতিবাদ করলে তারা আমাদের মারধর করে। জেলার মান্দা, মহাদেবপুর, পত্নীতলায় চলছে বালু তোলার প্রতিযোগিতা। এতে অন্তত ২০ টি পয়েন্টে আত্রাই নদীর বাঁধ রয়েছে ঝুঁকিতে।

নদী রক্ষা আন্দোলনের নেতারা বলছেন প্রশাসনের দুর্বলনীতির কারণে পরিবেশ ঝুঁকিতে পড়ছে এলাকাবাসী ।তবে বালু ব্যবসায়ীদের যুক্তি নদী থেকে বালু তোলায় ড্রেজিং নাব্যতা ফিরবে।

নওগাঁ নদী রক্ষা কমিটি সভাপতি খন্দকার রেজাউর রহমান টুকু বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি বালু মহাল লিজ দেয়ার নামে প্রশাসন পরিবেশ বিপন্ন করছে। প্রশাসনের ভূমিকা খুব দুর্বল কারণ তারা সেখান থেকে সুযোগ সুবিধা নিয়ে তাদের সহায়তা করছে।’

মহাদেবপুর মহিষবাথান পয়েন্টের বালু মহল লীজ গ্রহিতা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি বাঁধ বা বাসিন্দাদের জমি ক্ষতি না করে বালু উত্তোলন করা।’

নীতিমালা লঙ্ঘন করে মাটি ও বালু তোলা বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগ ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস প্রশাসনের এ কর্মকর্তাদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নওগাঁ নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুর রহমান বলেন, ‘আমি বাঁধের এলাকা পর্যবেক্ষণ করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করবো।’

মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘আমি বিষয়টি দেখে বালু মহালের জায়গা বাদ দিয়ে অন্য কোথাও থেকে তোলা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

জেলায় রয়েছে ছোট বড় ৭ টি নদী। বাঁধ সুরক্ষাসহ কমপক্ষে ১০ টি বিধি নিষেধ সাপেক্ষ নদী থেকে বালু তোলার দরপত্র দেয় স্থানীয় প্রশাসন। ২০২৩/ ২৪ অর্থ বছরে মহাদেবপুরে আত্রাই নদী থেকে ২ কোটি ২৩ লাখ টাকায় বালু তোলার আদেশ পায় মালেকা পারভিন ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

Scroll to Top