পদ্মায় বালু লুটের হিড়িক

শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার পদ্মা নদীতে বালু তোলা চলছে অবাধে। রাত হলেই শুরু হয় কাটার ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু কাটা। এতে হুমকির মুখে পড়েছে পদ্মা সেতু ও নড়িয়ায় ডান তীররক্ষা বাঁধ। বেড়িবাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে জাজিরা উপজেলার নাওডোবা জিরো পয়েন্টে। নদীগর্ভে চলে গেছে পাইনপারা আহামেদ মাঝিকান্দির গ্রামের মসজিদ, মাদরাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও তিন শতাধিক বসতভিটা।

জানা যায়, শরীয়তপুর জেলা পদ্মা-মেঘনা নদীবেষ্টিত। প্রমত্তা পদ্মার ভাঙনে বিভিন্ন সময় বিলীন হয়েছে হাজার হাজার বসতবাড়ি, ফসলি জমি, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। নড়িয়ায় পদ্মা নদীর তীররক্ষা বাঁধ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। জাজিরা ও সখিপুরে চলমান রয়েছে আরও দুটি প্রকল্প। পদ্মা নদীর ডান তীররক্ষা বাঁধের অপর প্রান্ত থেকেই নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর সাধুরবাজার চরআত্রা, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়ন সীমানা ও জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর বাবুচর ও সিডাচর এলাকা থেকে প্রতিদিনই নদী থেকে বালু তুলে বলগেটে করে নিয়ে যাচ্ছেন প্রভাবশালীরা।

নড়িয়া-জাজিরায় পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে অন্তত ৫০টি খননযন্ত্র দিয়ে চলে নদী থেকে বালু উত্তোলন। এক একটি খননযন্ত্র প্রতি রাতে ৭৫ হাজার ফুট থেকে ১ লাখ ফুট বালু তোলে। প্রতি ফুট বালু বিক্রি করা হয় ১.৫০ থেকে ২ টাকা দরে। এ বালু জেলা ও জেলার বাইরে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করা হয়। প্রভাবশালীরা নদীর বালু বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। নড়িয়া উপজেলা প্রশাসন কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করলেও এ বালুখেকোদের কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না।

স্থানীয় প্রভাবশালী অসাধু সিন্ডিকেট বিভিন্ন দলের নাম ভাঙিয়ে এসব বালু তুলছে। স্থানীয়রা একাধিকবার বালু তোলার প্রতিবাদে সমাবেশ, মানববন্ধন করলেও কোনো ফল মেলেনি। উল্টো হামলার শিকার হয়েছেন অনেকেই। বালুখেকোরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। বালু সিন্ডিকেটে অভিযুক্ত রফিক খাঁ বলেন, আমরা ৪টা চালাই। আমার সঙ্গে উজ্জ্বল আছে। বাবুরচর থেকে সুরেশ্বর ঘাট পর্যন্ত অনেকেই আছে। দেলোয়ার খাঁর ৩টা, জসিম মল্লিকের ৬টা, ফিরোজ খানের ৩টা, রিপন শেখ, আজহা শিকারি, সোহাগ, নুরুজ্জামান শেখ, শোভন খান, দিলু খানসহ অনেকেই এর সঙ্গে আছে। প্রশাসনিক সমস্যার কারণে উজ্জ্বলের নাম বলি।’

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, নড়িয়ায় পদ্মার ডান তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও দুটি বাঁধের কাজ চলমান। কাছ থেকে বালু উত্তোলন করা হলে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন নদীর গতিপথও বদলে দেয়। বর্ষা মৌসুমে বিভিন্ন পয়েন্টে নদী ভাঙন দেখা দেয়। নড়িয়া ইউএনও শংকর চন্দ্র বৈদ্য বলেন, পদ্মা নদীর বাঁধ রক্ষার স্বার্থে অবৈধভাবে কেউ যাতে বালু উত্তোলন করতে না পারে সেজন্য অভিযান অব্যাহত থাকবে। চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ-পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান মুঠোফোনে জানান, রাতের আঁধারে তারা বালু উত্তোলন করে। আমরা প্রায়ই অভিযান পরিচালনা করে থাকি। পদ্মা নদীতে বালু উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না। আমরা সোচ্চার রয়েছি।

Scroll to Top