লিবিয়ায় জিম্মি ২৩ যুবক, দালালের খপ্পরে পরিবার

লিবিয়ায় জিম্মি সন্তানকে বাঁচাতে ধার দেনা ও সম্পদ বিক্রি করে স্থানীয় দালালের হাতে তুলে দেন ১০ লাখ টাকা। বড় ছেলে সাইদ মোল্লাকে ফিরে পেতে এখন পাগল প্রায় অবস্থা শরীয়তপুরের শাহনাজ বেগমের। সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করতেই লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকেন তার সন্তানের মত দেখা যাচ্ছে এমন কারো দিকে।

তিনি বলেন, ‘৮ মাস ধইরা পোলাডারে দেহি না। কতাও কইতে পারি না। কি অবস্থায় আছে কেমন আছে কিছুই কইতে পারি না। নানান রহমের লোভ দেহাইয়া আমার ভিডা বাড়ি বেচাইয়া। হেই টাহায় ওয়না দেইখ্যা এনজিও তোর লোন করাইছে। অহন আমার পোলারও খবর নাই টাহা পয়সার খবর নাই’।

নিখোঁজ সন্তানের জন্য আহাজারি ও ধার দেনার কথা বলতে বলতেই ছুটে আসেন আশপাশের অনেক মানুষ। শাহনাজের মত এমন অভিযোগ তাদেরও। ১০ লাখ টাকা থেকে ২৪ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে কারোর কারোর কাছ থেকে। এমন সব কথা বলতে থাকেন আগতরা।

তারা বলেন, আমাদের ধার দেনা সন্তানহারা কষ্টের চেয়েও কোন অংশে কম নয়। মানুষের কাছে দিন দিন ধার দেনা হয়ে অপমানিত হয়ে আর কিভাবেই বা আমরা বেঁচে থাকব। দেনা পরিশোধ করার মত আমাদের অবশিষ্ট কিছুই নেই।

ভাগ্য বদলের আশায় দালালের মাধ্যমে ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়েন শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া ইউনিয়নের চর যাদবপুর গ্রামের সাইদ মোল্লা। লিবিয়ায় যাওয়ার পর আটক হন মাফিয়া চক্রের হাতে। গত ২২ মার্চ থেকে নিখোঁজ সাইদ।

সাইদের মতো একই পরিণতি আল আমিন, আমিনুল, রফিক, ফারুকসহ শরীয়তপুরের আরও ১৮ যুবকের। একই দালালের খপ্পরে পড়ে পার্শ্ববর্তী জেলা মাদারীপুরের ৫ জনের নামও রয়েছে নিখোঁজের এই তালিকায়। ১৬ থেকে ২২ লাখ টাকা চুক্তিতে নিখোঁজ প্রত্যেকেই স্থানীয় দালাল রাশেদ খান ও টুন্নুর খানের মাধ্যমে লিবিয়া হয়ে ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়েন। লিবিয়ায় জিম্মি করে প্রত্যেকের কাছ থেকে মুক্তিপণের জন্য আদায় করা হয় আরও ৫ থেকে ৮ লাখ টাকা করে। গত ২২ মার্চ থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে নিখোঁজ ২৩ যুবকের। কারোর সন্তান, কারোর বাবা, কারোর স্বামী কিংবা ভাই তাদের ফেরত চান। সঙ্গে আর্থিক যে লেনদেন হয়েছে সে টাকাও ফেরত দেয়ার দাবি তাদের।

মুক্তিপণের টাকা আদায়ের পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে দালাল চক্রের সদস্য রাশেদ ও টুন্নু। নিখোঁজদের লিবিয়া পাঠানোর কথা স্বীকার করলেও জোর করে কাউকে পাঠানো হয়নি বলে দাবি দালালের চাচি ও চাচাতো ভাইয়ের।

বিষয়টি নিয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে কোন তথ্য নেই। এখনও কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। আপনাদের কাছে যেহেতু বিষয়টি শুনলাম, গুরুত্ব সহকারে আমরা অবশ্যই এটি দেখব। তবে অভিযোগ পেলে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মানব পাচারকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিখোঁজদের সন্ধান পেতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়সহ সেনাবাহিনী বরাবরে লিখিত আবেদন করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।

Scroll to Top