চট্টগ্রামের বন্য হাতির আছাড়ে মো. আকবার (৩৮) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডে গতকাল বুধবার (২৪ অক্টোবর) ভোরে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আকবার কর্ণফুলীর বড় উঠান ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
ঘটনার পর আকবরের উঠানে অনেক মানুষ জড়ো হয়। সবার মধ্যে শোক ও আতঙ্কের ছাপ। সারেজমিনে দেখা গেছে, নিহত আকবারের বাড়িতে হাতির আক্রমণের বিভিন্ন চিহ্ন চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ির বেড়া, দেয়াল তছনছ করেছে হাতি।
আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ের আশপাশের এলাকায় ২০১৮ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ছয় বছরে হাতির আক্রমণে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নিহত আকবরের মা জোহরা খাতুন বলেন, প্রতিবেশীর চিৎকার শুনে ঘর থেকে বের হয় আকবর। পেছন পেছন বের হই আমি ও তার স্ত্রী মিনু আকতার। এ সময় ঘরের উঠানেই হাতির সামনে পড়ে যায় আকবর। সঙ্গে সঙ্গে সে দৌড় দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু উঠোনের সীমানায় রাখা জালে পেঁচিয়ে পড়ে যায়। হাতিটি সেখানে গিয়ে প্রথমে তাকে পায়ে পিষ্ট করে, এরপর শুঁড়ে তুলে আছাড় মারে। আমাদের চোখের সামনেই ছেলেটি মারা গেল।
স্থানীয়রা জানান, গত মঙ্গলবার রাত দুইটার সময় দেয়াঙ পাহাড় থেকে একটি হাতি নামে এলাকায়। ওই সময় গ্রামবাসী মো. কামালের রান্নাঘর ও মো. আনোয়ারের ঘরের বেড়া ভেঙে দেয় হাতিটি। এরপর একটি খামারের ৫০-৬০টি কলাগাছও উপড়ে ফেলে। ভোর চারটার দিকে একটি মুদিদোকান ভেঙে দুই বস্তা চাল ছিটিয়ে দেয়। এরপর দোকানের পেছনে আকবরের উঠোনে গেলে আক্রান্ত হন তিনি। সেখানেই হাতিটি আকবরকে হত্যা করে।
জলদী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, এখানকার বন্যহাতিগুলো দীর্ঘদিন ধরেই এই পথ ধরে চলাচল করে। সে একবার যে পথ দিয়ে চলাচল করে, পরবর্তী সেই পথ ধরেই চলে। এতে বিঘ্ন ঘটলে সে মারমুখী হয়ে যায়। গাছপালা বেশি না থাকলেও একসময় দেয়াঙ পাহাড়ে হাতি স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটাচলা করতে পারত। কিন্তু এখন তা পারছে না। এ কারণে কিছুটা ক্ষুব্ধ তারা। একটি হাতি দৈনিক ১৫ থেকে ১৬ ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার হাঁটে। খাবার খায় প্রায় ১৫০ কেজি। সব মিলিয়ে হাতির জন্য বিশাল জায়গা প্রয়োজন। কিন্তু তা এখন নেই। দেয়াঙ পাহাড়ে খাবার ও সুপেয় পানি পাওয়ায় চারটি হাতি অবস্থান নিয়েছে। হয়তো এসব হাতিকে ঢিল ছোড়া হয়েছে, না হয় উত্ত্যক্ত কিংবা বিরক্ত করা হয়েছে। অকারণে হাতি মানুষকে আক্রমণ করে না।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বন্যহাতির আক্রমণে মানুষ মৃত্যুর বিষয়টি আমরা অবগত। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আর্থিক ক্ষতিপূরণের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়া, পরিবেশ মন্ত্রণালয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে এর একটি স্থায়ী ব্যবস্থা করা হবে।
বন বিভাগ জানায়, ২০২০ সালের দিকে বন বিভাগ ছয়টি স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে ৬০ জন লোক নিয়ে। তাঁদের বাঁশি, মাইক ও পোশাক দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হাতি নামার সঙ্গে সঙ্গে সংকেত দিলে জনগণ আগুন ও আতশবাজি নিয়ে সজাগ হন। কিন্তু পরে তা বন্ধ হয়ে যায়।