অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ইসলামী ব্যাংকসহ কয়েকটি ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া ব্যবসায়ী আনসারুল করিম চৌধুরীকে গতকাল সোমবার চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটক করা হয়। আনসারুল আলোচিত–সমালোচিত ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ফুফাতো ভাই। সম্প্রতি এস আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ ওঠে। সিআইডি এর তদন্ত করছে।
ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইটে করে আনসারুল করিম চৌধুরী দুবাই পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিমানবন্দর অভিবাসন পুলিশের কাছে তাঁর তথ্য ছিল। পরে আটক করে তাঁকে পতেঙ্গা থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, অর্থ পাচার আইনের মামলা রয়েছে আনসারুল করিম চৌধুরী বিরুদ্ধে। সিআইডি এটি তদন্ত করছে। তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে চট্টগ্রাম আদালতে পাঠানো হয়। পরে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা ঋণ
আনসারুলের অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানেই ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা আটকে আছে ইসলামী ব্যাংকের। ‘ইনহেরেন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড ইমপেক্স লিমিটেড’ নামের প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটির চাক্তাই শাখা থেকে এই ঋণ নেন আনসারুল।
ঋণ অনুমোদনের নথিতে চট্টগ্রামের আছাদগঞ্জের রামজয় মহাজন লেনে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা উল্লেখ করা হলেও গত দুই বছরেও এই প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। এমনকি ওই সড়কের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারাও এই প্রতিষ্ঠানের নামও শোনেননি বলে জানান ।
ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের বিভিন্ন মেয়াদে ইসলামী ব্যাংক চাক্তাই শাখা থেকে ৯৬০ কোটি টাকা ঋণ নেয় ইনহেরেন্ট ট্রেডিং। বছর শেষে তা পরিশোধ করার কথা থাকলেও তিন বছরে শোধ করেনি এক টাকাও। টাকা পরিশোধ ছাড়াই বছর বছর নবায়ন করে নিয়মিত রাখা হচ্ছে এক বছর মেয়াদি এই ঋণ। যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৩০ কোটি টাকা।
ব্যাংকটির একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, এই ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের কাছে ঢাকা-চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকার ১ হাজার ৪৩১ শতক জমি জামানত দেখানো হয়েছে। যার মূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ৫৯২ কোটি টাকা।
আছাদগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, আনসারুল আলম চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজানে। তিনি এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের ফুফাতো ভাই।
অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানে ১৭০ কোটি টাকার প্রণোদনা
ঋণের তথ্যে দেখা যায়, শুধু ঋণ নয়, আনসারুলের প্রতিষ্ঠান ইনহেরেন্টকে ১৭০ কোটি টাকার করোনাকালীন প্রণোদনাও দিয়েছে শাখাটি। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পোদ্যোক্তাদের জন্য এই প্রণোদনা দেওয়ার নিয়ম থাকলেও নামসর্বস্ব এই প্রতিষ্ঠানকেই এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক ছাড়াও আনসারুলের নামে ৩৪০ কোটি টাকার ঋণ রয়েছে জনতা ব্যাংকে। ২০২২ সালে ব্যাংকটির আগ্রাবাদ করপোরেট শাখা থেকে এই ঋণ নেন আনসার। এস আলমের মালিকানাধীন ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংকের ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকার এফডিআর দেখিয়ে আনসার ট্রেডিংয়ের নামে এই ঋণ নেয়। ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার এফডিআর থাকা এই স্বত্বাধিকারীর অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফরমে মাসিক আয় উল্লেখ রয়েছে মাত্র ২ লাখ টাকা।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রাম সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, কেন কার নির্দেশে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ মঞ্জুর হয়েছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।