ছয় বছরের সাম্মিকে নিয়ে কোথায় যাবেন মেঘলা?

ছয় বছর বয়সেই বাবাকে হারিয়েছে সাম্মি আক্তার। মেঘলা বেগম (৩১) এখন স্বামীকে হারানোর বেদনা আর মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন মো. শামসু মোল্লা (৬২)। এখন সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে তাঁদের।

শামসু শহরের পূর্ব খাবাসপুর মহল্লার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ফরিদপুরে একটি পরিবহন বাসের চালক ছিলেন। প্রায় তিন শতাংশ জমির ওপর একটি আধা পাকা ঘরে এই পরিবারটির বসবাস। শামসু-মেঘলা দম্পতির একমাত্র মেয়ে ছয় বছরের সাম্মি। সাম্মি স্থানীয় বায়তুল আমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী।

শামসুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এখনো মাতম চলছে। মেঘলা বলেন, ‘আমার সব শেষ হইয়া গেছে। মাথার ওপর কোনো ছাদ থাকল না। সেই ছিল আমাদের দরদি। দুনিয়াতে আমাদের দেখার আর কেউ নাই।’

মেঘলা ও এলাকার লোকজন বলেন, সরকার পতনের পর ৫ আগস্ট বিকেলে গুলিতে নিহত হন শামসু। ওই দিন সন্ধ্যায় একদল ব্যক্তি ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় আক্রমণ করতে গেলে পুলিশ গুলি চালায়। শামসু ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। গুলিটি তাঁর নাক ও ঠোঁটের মাঝ দিয়ে ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। এরপর পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় থানা ঘেরাও করতে যাওয়া ব্যক্তিদের। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও মুহুর্মুহু গুলি ছোড়ে। ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এ সময় থানা রোড–সংলগ্ন বাদামপট্টি সড়কে ‘বই পরিচয়’ নামের এক দোকানের সামনে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পড়ে ছিলেন শামসু। খবর পেয়ে পরিবারের সদস্যরা এসে সড়কে পড়ে থাকা শামসুকে উদ্ধার করে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে শামসুকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তারপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা দেন।

মো. শামসু মোল্লা ছবি: সংগৃহীত

কাঁদতে কাঁদতে মেঘলা বেগম জানান, ওই দিন বিকেল চারটার দিকে তিনি ও শামসু একত্রে বাড়ি থেকে বের হন। তিনি পথে দেবরের বাড়িতে যান। আর শামসু একটু ঘুরতে যান। এই একটু ঘুরতে যাওয়া লোকটি ফিরে এল লাশ হয়ে।

মেঘলা বেগম যখন কাঁদছিলেন, তখন তাঁর পাশে প্রতিবেশী নারীরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কেউ সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা পাচ্ছিলেন না। মেঘলার মা ফুলি বেগম (৫৬) বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি না মেঘলা ও সাম্মি কীভাবে বাঁচবে, কে দেখবে? ৯ বছর আগে বিয়ে হয়েছে মেঘলার। এই অল্প বয়সে স্বামীকে হারাল। আমরাও গরিব মানুষ।
আমাদের বাড়িতে নিয়ে যে মা ও মেয়েকে রাখব, তার সামর্থ্যও নেই।’

এলাকার বাসিন্দা এ কে কিবরিয়া বলেন, ‘যে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি চলে যায়, সে পরিবার শুধু বোঝে, তারা কী হারাল। মেয়ে এতিম হয়েছে, তা–ও বোঝার মতো বয়স তার হয়নি। এ মেয়েটি (সাম্মি) বড় হয়ে তার বাবার মৃত্যুর কারণ আমাদের কাছে জানতে চাইবে, তার কী উত্তর দেব আমরা?’

Scroll to Top