ছাত্র–জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন বিকেলে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গণমিছিলে অংশ নিয়েছিলেন পোশাকশ্রমিক মো. আয়াতুল্লাহ। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ১১ দিন পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়কের সহায়তায় রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে তাঁর লাশ পেয়েছেন স্বজনেরা।
নিহত আয়াতুল্লাহর বাড়ি সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার চামরদানী ইউনিয়নের জলুষা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের কৃষক মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে। গতকাল শুক্রবার রাতে হাসপাতালের মর্গে গিয়ে তাঁর লাশ শনাক্ত করেছেন তাঁর বড় ভাই সোহাগ মিয়া।
এলাকাবাসী ও স্বজনেরা জানান, মধ্যনগরের জলুষা গ্রামের সোহাগ মিয়া (৩২) চার বছর ধরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর পদে চাকরি করেন। মাসখানেক আগে তাঁর ছোট ভাই আয়াতুল্লাহ আরেকটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ নেন। ৫ আগস্ট বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি গাজীপুরের সফিপুর আনসার একাডেমির সামনে গণমিছিলে অংশ নিয়ে নিখোঁজ হন। ওই দিন আনসার একাডেমির সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এরপর তাঁর বড় ভাই সোহাগ মিয়া গাজীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাননি।
নিহতের পরিবার জানায়, গতকাল রাত নয়টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুজন সমন্বয়কের সহায়তায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে গিয়ে ছোট ভাইয়ের লাশ শনাক্ত করেন সোহাগ মিয়া। আজ শনিবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের কাছে আয়াতুল্লাহর লাশ বুঝিয়ে দেয়।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সোহাগ মিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে আয়াতুল্লাহ সবার ছোট। একটি মাদ্রাসায় মিজান পর্যন্ত (ষষ্ঠ শ্রেণি) পড়ে সংসারের অভাব ঘোচাতে পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। ছাত্র–জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তাঁর শরীরে গুলি বা আঘাতের চিহ্ন আছে কি না, এখনো দেখেননি। ছোট ভাইয়ের লাশ নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
চামরদানী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য উজ্জ্বল মিয়া বলেন, ‘আয়াতুল্লাহ সম্পর্কে আমার আত্মীয়। তাঁদের পরিবার ও স্বজনদের মধ্যে শোকের মাতম চলছে। শত বুঝিয়েও তাঁর মা–বাবার কান্না থামানো যাচ্ছে না। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিচার চাই।’
মধ্যনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি শেরেবাংলা নগর থানার অধীনে। ওই পোশাকশ্রমিকের লাশ শনাক্তকরণে সহায়তা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দুজন সমন্বয়ক। তাঁদের সঙ্গে তাঁর (ওসি) কথা হয়েছে। এ ছাড়া স্বজনেরা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ গ্রহণের দাবি জানিয়েছিলেন। তিনি শেরেবাংলা নগর থানার ওসির সঙ্গে সে ব্যাপারেও কথা বলেন।