দেশে সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত কলেজছাত্রের লাশ ফেরত চায় তার পরিবার। তাদের দাবি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সোমবার (৫ আগস্ট) গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে বিজয় মিছিল চলাকালে পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে হৃদয় হোসেন (২০) নিহত হয়।
এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যা দেখে হৃদয়ের বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। হৃদয় গোপালপুর উপজেলার আলমনগর গ্রামের কৃষক লাল মিয়া এবং রেহানা বেগমের একমাত্র সন্তান।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই দিন কোনাবাড়ীর প্রধান সড়কে ৮ থেকে ৯ জন পুলিশ সদস্য একজন যুবককে বেধড়ক মারধর করছে। যুবকটি তাদের হাতেপায়ে ধরে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল। এক পর্যায়ে একজন পুলিশ সদস্য খুব কাছ থেকে তাকে গুলি করে। এরপর পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এবং যুবকটি কিছুক্ষণ ছটফট করে নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
হৃদয়ের ভগ্নিপতি ইব্রাহিম হোসেন জানান, হৃদয় হেমনগর ডিগ্রি কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষে পড়তো। দরিদ্র পরিবারের পক্ষে লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব না হওয়ায়, গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে একটি মেসে থেকে ভাড়ায় ইজিবাইক চালিয়ে আয়-রোজগার করতো এবং নিজের পড়াশোনার খরচের পাশাপাশি পরিবারের আর্থিক সহযোগিতা করতো।
তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন কাজের কথা বলে হৃদয় বাড়ি থেকে বের হয়। গুলির সময় তিনি পাশের একটি ভবনে আশ্রয় নেন এবং সেখান থেকে দেখেন, কয়েকজন পুলিশ সদস্য গুলিবিদ্ধ এক যুবককে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পরে থানার সামনে যুবকের নিথর দেহ রেখে দেয়। হৃদয়ের মতো দেখতে হলেও, গুলির ভয়ে তিনি কাছে যেতে সাহস পাননি। ঘটনার পর হৃদয়ের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। থানাসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও হৃদয়ের সন্ধান মেলেনি। পরে ঘটনাস্থল থেকে তার পরনের লুঙ্গি পাওয়া গেলে নিশ্চিত হয় যে নিহত যুবক হৃদয় এবং তার মরদেহ গুম করা হয়েছে।
কোনাবাড়ীর গ্যারেজ মালিক হাফিজুর রহমান জানান, হৃদয় তার গ্যারেজের ইজিবাইক ভাড়ায় চালাতো। গোলমালের সময় গ্যারেজে ইজিবাইক রেখে মেসে ফেরার পথে পুলিশের ধাওয়ায় সে দুই ভবনের মাঝখানে আশ্রয় নেয়, সেখান থেকে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়।
গোপালপুর উপজেলার আলমনগর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার আব্দুল হামিদ জানান, তিনি কোনাবাড়ীতে ব্যবসা করেন এবং ঘটনাস্থলের নিকটে তার দোকান রয়েছে। গুলির ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে তিনি নিশ্চিত হন যে নিহত যুবক তার গ্রামের ছেলে হৃদয়। পরিবারের লোকজন হৃদয়ের খোঁজ না পেয়ে উদ্বিগ্ন ছিল। পরে ভাইরাল হওয়া ভিডিও, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং পোশাক দেখে হৃদয়ের বাবা লাল মিয়া নিশ্চিত হন যে নিহত যুবকই তার ছেলে হৃদয়। এরপর থেকে হৃদয়ের বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে যায়। মা রেহানা বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। তারা একমাত্র ছেলের লাশ ফেরত চান এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।