স্বাভাবিক হচ্ছে কক্সবাজার, আসছে পর্যটক

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় আবারও স্বাভাবিক হয়ে উঠছে পর্যটন শহর কক্সবাজার। খুলেছে শহরের দোকানপাট, গতি ফিরেছে ব্যবসা-বাণিজ্যেও। এরই মধ্যে আবারও কক্সবাজারে আসতে শুরু করেছেন পর্যটকেরা।

গতকাল শুক্রবারও শহরের সড়কগুলোতে শিক্ষার্থীরা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করতেও দেখা গেছে তাঁদের। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে হাটবাজারে সচেতনতামূলক প্রচারণাও চালিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখতে শহরের প্রতিটি বাজারে মূল্যতালিকা টাঙানো হয়।

গতকাল সকাল ৯টায় শহরের ব্যস্ততম কলাতলী ডলফিন মোড়ে দেখা গেছে, কয়েকজন ছাত্রছাত্রী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছেন। যানজটপ্রবণ মোড়টিতে সুশৃঙ্খলভাবে চলছে সব ধরনের যানবাহন।

সকাল ১০টার দিকে শহরের বড়বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা মাইকিং করে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলছেন, ‘প্রভাবশালী যেই হোক, কাউকে আপনারা চাঁদা দেবেন না। মাছ-মাংস, সবজির অতিরিক্ত মূল্য নেবেন না। একজনের জায়গা আরেকজন দখল করবেন না। আপনাদের সঙ্গে ছাত্ররা রয়েছেন, আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।’

বেলা তিনটার দিকে শহরের প্রধান সড়কের ঘুমগাছ তলায় কক্সবাজার স্কাউটসের কয়েকজন তরুণ-তরুণীকে যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। এ সময় পাশের সড়কের দেয়ালে বিভিন্ন স্লোগানসংবলিত গ্রাফিতি আঁকতে দেখা যায় রামু ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। শহরের বাহারছড়া বাজার, বিমানবন্দর সড়কের কানাইয়ার বাজার, টেকপাড়া, কালুরদোকান, বাস টার্মিনাল ও লিংকরোড বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি বাজারেই মূল্যতালিকা টাঙানো। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরা এই তালিকা টাঙিয়েছেন।

শহরের বাহারছড়ায় কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখনো বাজারে শাকসবজি, মাছ-মাংসের কিছুটা বেশি। মাছের বাজারে প্রতি কেজি কোরাল বেচাবিক্রি হচ্ছে ৭৮০-৮৫০ টাকা, রুপচাঁদা ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, ইলিশ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা, লইট্যা ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।

জানতে চাইলে মাছ বিক্রেতা সোহেল আহমদ বলেন, বৈরী পরিবেশে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। তাই বাজারে মাছের সংকট থাকায় দাম কিছুটা বেশি।

৫ আগস্ট বিকেলে কক্সবাজারে থানা, ট্যুরিস্ট ও ট্রাফিক পুলিশের কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। গাড়ি ও আসবাব লুটও করা হয়েছে। চারটি হোটেলেও ভাঙচুর, লুটপাট ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। লুটপাট ও ভাঙচুর করা হয় অর্ধশতাধিক দোকান ও কয়েকটি বাসভবনে। এসব ঘটনায় কক্সবাজারে সাধারণ মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

চাঁদাবাজি ও হামলা-ভাঙচুর বন্ধের দাবি জানিয়ে গত বুধবার বিকেলে সৈকত সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেন হোটেলমালিকেরা। কক্সবাজার হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘আমরা নিরাপদে ব্যবসা করার পরিবেশ চাই। গত ৩০ বছরে এই হোটেল-মোটেল জোন এলাকায় কোনো অগ্নিসংযোগ-লুটপাট, চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটেনি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কিছু চিহ্নিত ব্যক্তি এই অপকর্ম চালাচ্ছেন।’

হোটেলমালিকদের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান। তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের কেউ এই চাঁদাবাজি, হামলা-লুটপাটের সঙ্গে জড়িত নয়। কিছু চোর-বাটপার এসব অপকর্ম করছে। সম্মিলিত উদ্যোগে এসব অপকর্ম প্রতিরোধ করতে হবে।

গতকাল কক্সবাজার সদর মডেল থানায় গিয়ে দেখা যায়, থান পাহারা দিচ্ছেন আনসারের সদস্যরা। ভেতরে পুলিশের কয়েকজন সদস্য। থানার ভেতরে-বাইরে ভাঙচুর ও পোড়ানোর ক্ষত। ভেতরে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, চেয়ার-টেবিল সবকিছুই ভাঙাচোরা। আনসার সদস্য সাইদুর রহমান বলেন, পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কাউকে থানায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

চকরিয়া, রামু, পেকুয়া, টেকনাফ, উখিয়া, ঈদগাঁও থানারও একই অবস্থা। ৫ আগস্টের হামলায় শতাধিক পুলিশ আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। জেলা পুলিশের অন্তত এক হাজার পুলিশ হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তখন আত্মগোপনে চলে যান।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, থানা-পুলিশের কার্যক্রম স্বাভাবিক করা, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।

Scroll to Top