ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে পৃথক ঘটনায় যুবদলের দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। গত মঙ্গলবার রাত ও গতকাল বুধবার দুপুরে হত্যাকাণ্ডের এসব ঘটনা ঘটে। তবে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দুটি মরদেহ দাফন করা হয়েছে। পুলিশ কর্মবিরতিতে থাকায় আইনগত কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে উপজেলা যুবদল কর্মী জসিম উদ্দিনের (৩৪) নেতৃত্বে পৌর শহরের নতুনবাজার ম্যাক্সিস্ট্যান্ড দখল করতে যান তাঁর সমর্থকেরা। সেখানে যুবদলের আরেক পক্ষ সুমনের সমর্থকদের সঙ্গে তাঁদের বাগ্বিতণ্ডা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সুমনের সমর্থকেরা জসিম উদ্দিনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। সংঘর্ষের সময় তুষার, আবদুল হামিদ, মাহবুব, সুবল চন্দ্র মোদক নামের যুবদলের কয়েকজন কর্মী আহত হন। তাঁরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
জসিম উদ্দিন সালটিয়া ইউনিয়নের ষোলহাসিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিতে তাঁর লাশ নিয়ে পৌর এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিএনপির একাংশের নেতা-কর্মীরা। এতে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ঘটনার পর দলটির কয়েকজন নেতা-কর্মীর বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে পৌর এলাকার কাচারি রোড রেলক্রসিং এলাকায় সবুজ আকন্দ (৩২) নামের যুবদলের আরেক কর্মীকে হত্যার ঘটনা ঘটে। তিনি গফরগাঁও ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক নেতা জানান,’নিজেদের মধ্যে দখল ও ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ওই দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে রাজনৈতিক কোনো বিষয় ছিল না। যাঁরা এগুলো করছেন, তাঁরা সুযোগসন্ধানী, ডাকাত ও লুটপাটকারী। তাঁদের কোনো দল নেই।’
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সবুজ আকন্দ গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ওই এলাকায় ঘুরতে গেলে দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাত করে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দেবাশীষ রাজবংশী।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এলাকাটিতে চিহ্নিত মাদক কারবারি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন সবুজ। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে নিজ দলের লোকজনই তাঁর বুকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করছে বলে তাঁদের ধারণা।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ জানান,’নিহত দুজনই যুবদলের কর্মী।’
গফরগাঁও উপজেলাটি ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির অধীন একটি এলাকা। দলটির জেলা পর্যায়ের দায়িত্বশীল এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে দখল ও ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ওই দুটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এতে রাজনৈতিক কোনো বিষয় ছিল না। যাঁরা এগুলো করছেন, তাঁরা সুযোগসন্ধানী, ডাকাত ও লুটপাটকারী। তাঁদের কোনো দল নেই।’
এদিকে পুলিশ কর্মবিরতিতে থাকায় দুটি মরদেহ পরিবারের লোকজন ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করেছে। এ বিষয়ে গফরগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকারি মুঠোফোন নম্বরে গতকাল বুধবার রাত ১১টার পর থেকে কয়েক দফা কল করা হয়। তবে তিনি এতে সাড়া দেননি।
গফরগাঁও উপজেলায় বিএনপির রাজনীতি অন্তত পাঁচটি উপদলে বিভক্ত বলে জানান বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবু ওয়াহাব আকন্দ। তিনি বলেন, নিহত দুজনই যুবদলের কর্মী।