ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দফায় দফায় সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১৭ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত থেমে এ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কিছু ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

এসব ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ জেলা ছাত্রলীগের দুই নেতা আহত হয়েছেন।

শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল ১১টার দিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন ছাত্রী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হন। এক পর্যায়ে তারা কলেজের প্রধান ফটকের সামনে বসে কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ সময় সদর উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগ নেত্রী আফরিন ফাতেমা জুই সেখানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সরে যেতে বলেন। এতে কাজ না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে তাদের গা ঘেঁষে এবং সামনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।

একই সময়ে কলেজ সংলগ্ন এলাকায় অন্তত ১০ টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীর লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ সময় জেলা ছাত্রলীগের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেলে করে লাঠিসোটা, কাঠের টুকরা ও কাঠ দিয়ে বানানো ছোট আকারের বৈঠা নিয়ে কলেজের সামনের সড়ক, লেভেল ক্রসিং এলাকা, নিউ মৌড়াইল ও কাউতলীতে অবস্থান নেন। তবে শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টা পর্যন্ত কলেজের সামনে বসে কর্মসূচি পালন করে মিছিল নিয়ে চলে যান।

দুপুর সোয়া ১২টার দিকে কাউতলী মোড় থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন। পরে একটি মিছিল নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। মিছিলটি ফারুকী পার্কের সামনে এসে পৌঁছালে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম রবিন সহ-সভাপতি ওবায়দুর রহমান বাবুসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করেন। এসময় ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

পরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা ও বৈঠা নিয়ে ধাওয়া করলে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা রবিউল আলম রবিন ও ওবায়দুর রহমান বাবু আহত হন।

কলেজের সামনে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থী ফারহানা শারমিন বলেন, ‘ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ব্যানার টেনে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে। আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে স্লোগান দেওয়া শুরু করেছে। তারা আমাদের বিভিন্নভাবে অপমানিত করেছে। কারণ আমরা কোটার সংস্কারের দাবিতে এসেছি। আমার ভাই ও বোনের শরীরে থেকে যে রক্ত ঝরেছে তার প্রতিবাদ জানাতে এসেছি।’

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের কোনো বাধা দেয়নি। তাদের কোনো দাবি থাকলে তা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে দিতে বলেছি। তাদেরকে পানিসহ খাবার দেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাদের হামলায় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল রবিন ও বাবু আহত হয়েছে। তার ডান চোখের ওপর চারটি সেলাই লেগেছে।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখছি।’ তিনি জানান, শহরের এলাকার বিভিন্ন মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে‌।

Scroll to Top