কুষ্টিয়ায় পদ্মা-গড়াইয়ের ১১ পয়েন্টে তীব্র ভাঙন

কুষ্টিয়ার উপর দিয়ে বয়ে চলা প্রমত্তা পদ্মা ও তার প্রধান শাখা নদী গড়াইয়ের তীব্র ভাঙনে তীরবর্তী মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে এবার পদ্মা নদীর সাতটি পয়েন্টে ও গড়াই নদীর ৪টি পয়েন্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনে কৃষি জমি, ঘরবাড়ি, রাস্তা ও বাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদী তীরবর্তী জনপদ টিকিয়ে রাখতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আতঙ্কিত বাসিন্দারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে দৌলতপুর উপজেলার ৪টি ও ভেড়ামারা উপজেলার ৩টি পয়েন্টে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের উদয়নগর বিওপি ক্যাম্পের কাছে ২শ মিটার অংশ, মরিচা ইউনিয়নের হাটখোলাপাড়ায় ১ কিলোমিটার, মরিচা ইউনিয়নের ভুরকাপাড়ায় ২ কিলোমিটার, একই ইউনিয়নের কোলদিয়াড়ে ৭শ মিটার জায়গাজুড়ে পদ্মা নদীর ডানতীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

আর ভেড়ামারা উপজেলার ফয়জুল্লাহপুরে ১ কিলোমিটার, মসলেমপুরের দুটি পয়েন্টে ৫৫০ মিটার ও ৩৮০ মিটার এলাকায় পদ্মা নদীর ডানতীরে ভাঙন হচ্ছে। এসব পয়েন্টে নদী ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে কৃষকের আবাদি জমি। ভাঙছে তীরবর্তী রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি। সব হারিয়ে মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।

মসলেমপুরের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, নদী অনেক দূরে ছিলো, এখন ভাঙতে ভাঙতে আমাদের বাড়ির কাছে চলে আসছে। এখনি প্রতিরোধ না করা গেলে আমরা ভিটেছাড়া হয়ে যাবো।

এদিকে পদ্মার প্রধান শাখা নদী গড়াইও ভেঙে চলেছে কুমারখালী ও খোকসা উপজেলার ৪টি পয়েন্টে। কুমারখালী পৌর এলাকার কুন্ডুপাড়ায় নদীর বামতীরে ১শ মিটার, সদকী ইউনিয়নের পাথরবাড়িয়ায় বামতীরে ৫০ মিটার, খোকসা উপজেলার ওসমানপুর ইউনিয়নের হিজলাবট দ্বীপচর আদর্শ আশ্রয়ণ প্রকল্পে বামতীরে ৭শ মিটার ও বেতবাড়িয়া ইউনিয়নের জাগলবা, ভবানীপুর ও শ্যামপুরে বামতীরে ১ দশমিক ২ কিলোমিটার অংশে ভাঙন তীব্র হয়েছে। বিশেষ করে ভূমিহীন পরিবার ও আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। এখানকার বাসিন্দারা বলছেন, আশ্রয়ণ ভেঙে গেলে কোথায় থাকবো? দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ভাঙনের এসব পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই অর্থ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। দ্রুতই জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে।

এদিকে ভেড়ামারার মসলেমপুরে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড, পশ্চিমাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. শাহজাহান সিরাজ। এ সময় তিনি বলেন, নদী তীরে ব্যবসায়ীদের জড়ো করে রাখা বালুর স্তূপ ভাঙন তীব্র করছে।

কুষ্টিয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য কামারুল আরেফিন বলেন, নদী তীরে বালুর স্তূপ রাখা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলবো।

তিনি আরও বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়ায় স্থায়ী বাধ নির্মাণের মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ঠিকাদারও নিয়োগ হয়েছে। বর্ষার পরেই শুরু হবে কাজ। পরের মৌসুম থেকে পদ্মা নদীর ডানতীরে আর ভাঙন হবে না।

Scroll to Top