তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা ও সুষ্ঠু বণ্টনের লক্ষ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। এ অবস্থায় পানি যেহেতু ভারত দেবে তারাই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অংশ নেবে, এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১৪ জুলাই) বিকেল ৪টার পর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন ইঙ্গিত দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনতো তিস্তায় বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত৷ কিন্তু পানি যেহেতু ভারত আটকে রেখেছে, তাই তারাই তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়ন করুক৷ সেটাই ভালো হবে সবার জন্য৷ এখানে কোনো রাখঢাকের বিষয় নেই৷ সবার সাথেই বন্ধুত্ব, কারো সাথেই শত্রুতা নয়৷
তিস্তার পানি নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত টানাপোড়েন বহুদিনের। বার বার উদ্যোগ নিয়েও সমাধান হয়নি সমস্যার। এতে পানির সুষ্ঠু বণ্টনের অভাবে দিন দিন বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের কৃষির জীবন-জীবিকার ওপর। এ সংকট কাটিয়ে তিস্তার পানি প্রবাহ বাড়াতে মহাপরিকল্পনার কথা ভাবছে বাংলাদেশ।
এ অবস্থায় সম্প্রতি ভারত সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিস্তা মহাপরিকল্পনায় চীন ও ভারত উভয় দেশই বিনিয়োগে আগ্রহী জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, প্রস্তাব তো অনেক আসে, তবে যেখান থেকে যে প্রস্তাবই আসুক না কেন, সেই প্রস্তাবটা আমার দেশের জন্য কতটুকু প্রযোজ্য হবে এবং কল্যাণকর হবে সেটা ভেবেই গ্রহণ করা হবে।
তিনি আরও বলেছিলেন, এ প্রজেক্ট যদি আমরা করি, তার জন্য চীন ও ভারত প্রস্তাব দিয়েছে। অবশ্যই আমরা বিবেচনা করব, কোন প্রস্তাব গ্রহণ করলে আমাদের দেশের মানুষের কল্যাণে আসবে, সেটাই গ্রহণ করব। ভারত বলেছে তারা করতে চায়, তারা টেকনিক্যাল গ্রুপ পাঠাবে, অবশ্যই তারা আসবে। চীনও একটা ফিজিবিলিটি স্টাডি করছে, ভারতও একটা করবে। আমাদের কাছে যাদেরটা সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য এবং লাভজনক, আমরা সেটাই করব। চীন সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে৷ ভারতও করবে৷ হ্যাঁ, ভারত যদি এটা করে দেয়, তাহলে তো হলোই৷ তাহলে তো প্রতিদিন পানি নিয়ে প্যানপ্যান শুনতে হয় না৷
রোববারের সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ফের জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে যখন হাত যখন দিয়েছি, আমি ছাড়বো না৷ দুর্নীতিবাজ ধরছি বলেই, এখন সবাই জানতে পারছেন৷ আমার বাসায় কাজ করে গেছে, সেও নাকি এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক, হেলিকপ্টার ছাড়া চলেই না৷ তার অপরাধ জানতে পেরেছি, পরে তাকে বের করে দিয়েছি, নিজের মতো ব্যবস্থা নিয়েছি।
তিনি বলেন, আপন-পর জানি না, দুর্নীতি যেখানে হোক, যেই হোক, আমি তাকে ধরবো৷ জিরো টলারেন্স যখন বলেছি, তখন এটা করেই ছাড়বো৷
কোটাবিরোধী আন্দোলন বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আন্দোলন করছে, তারা আইন মানেন না৷ সংবিধান চেনেন না৷ সরকার কীভাবে চলে, তা নিয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই৷ মুক্তিযোদ্ধার নাতনি কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে, এখন সে বলে কোটা চাই না৷ ওই মেয়েকে বলবো- বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে বাড়ি গিয়ে বসে থাকুক, কোনো দরকার নেই পড়াশোনার৷
এ সময় কোটা বিষয়ে আদালতের রায়ের ওপর নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘তারা পড়ালেখা করে জিপিএ পায়, কিন্তু এসব (সংবিধান, আইন) নিয়ে কোনো ধারণা রাখে না তারা৷ আদালততো রায় দিয়েছে, এখানে নির্বাহী বিভাগের কিছু করার নেই৷ এটি আন্দোলনকারীদের বুঝতে হবে৷ কোটা আন্দোলন এর পরেও চালিয়ে গেলে তারা চালাবে৷ ধ্বংসাত্মক কর্মসূচি করলে আইন তার নিজ গতিতে বিষয়টিকে দেখবে৷
সংবাদ সম্মেলনে সফর নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন তাদের মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এবারের চীন সফরে ২১টি সমঝোতা সই হয়েছে। যারা সফরের সমালোচনা করছেন, তারা কি জেনে-বুঝে এসব করছেন? নাকি শুধুই আমাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে? ভারত সফরের পর বলা হলো- দেশ বেচে দিয়েছি, এখন বলছে চীন কিছু দেয়নি৷ এগুলো যারা বলেন, তাদের মানসিক অসুস্থতা আছে৷ তাছাড়া, এভাবে এসব নিয়ে বানোয়াট প্রশ্ন তোলার কথা না।