মিয়ানমারের রাখাইনে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। চলমান এই সংঘাতে টেকনাফের নাফ নদের সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেক বাসিন্দা এরমধ্যে ঘর ছেড়ে বাহিরে অবস্থান করছেন।
সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, সংঘাতের শুরু থেকে আগে কখনো মর্টার শেল ও বোমা বিস্ফোরণের এতো বিকট শব্দ শোনা যায়নি। বর্তমানে সংঘর্ষের প্রতিটি শব্দে এপারে সীমান্তের ঘরবাড়ি কেঁপে উঠছে।
গতকাল রবিবার রাত থেকে শুরু হওয়া বোমা ও মর্টার শেল বিস্ফোরণের শব্দ আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত শোনা যাচ্ছে। বিকট শব্দে নাফ নদ সীমান্তের বাড়িঘর পর্যন্ত কেঁপে উঠে এবং স্থানীয়দের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
টেকনাফ খাংকার পাড়া বাসিন্দা মো. আনোয়ার বলেন, ‘মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে সংঘর্ষ চলে আসছে, কিন্তু গত দুইদিন ধরে বোমা ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণের শব্দ অনেক ভয়ানক। এমনকি ঘরের দরজা-জানালা ও আসবাবপত্র কেঁপে উঠছে। আমরা যারা সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করছি তাদের খুবই আতঙ্কে রাত কাটাতে হচ্ছে।’
পৌরসভার কূলাল পাড়া এলাকার ফেরদৌস পারভিন বলেন, ‘গতকাল রাত থেকে মিয়ানমারের ভেতরে প্রচণ্ড বোমার শব্দ শোনা যাচ্ছে। বোমার শব্দে এপারের বাড়ি-ঘর থরথর করে কেঁপে ওঠছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে শিশু থেকে বৃদ্ধরাও।’
পৌরসভার জালিয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. ইসলাম বলেন, ‘মিয়ানমারে ভেতরের বোমা ও মর্টাশেলের শব্দ মনে হচ্ছে ঘরের সামনে পড়ছে। রাত থেকে বোমার শব্দে কাঁপছে টেকনাফ পৌর শহর। আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। জন্মের পর থেকে এরকম বোমার শব্দ কখনো শুনেনি।’
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন বলেন, ‘নাফ নদের ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তর থেকে বেশ ভারী গোলাবর্ষণের শব্দ শুনতে পেয়েছি। এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নাফ নদে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা আতঙ্কে রয়েছেন।’
টেকনাফ (২বিজিবি) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জানান, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলছে। তবে নাফ নদীর বাংলাদেশ সীমান্তের এপারে মাদক ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বর্ডার গার্ডের (বিজিবি) টহল কার্যক্রম জোরদার রয়েছে। পাশাপাশি টেকনাফ সীমান্তে কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.আদনান চৌধুরী বলেন, ‘সীমান্তে জনপ্রতিনিধিরা বিভিন্ন এলাকায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়ার বিষয়টি অবহিত করেছেন। মিয়ানমারে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে সীমান্ত এলাকায় বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত বাংলাদেশের নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’