সুন্দরবনে বন্যপ্রাণীর রোগ নির্ণয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে চলছে গবেষণা। রোগ নির্ণয় করা হবে বাঘ এবং এর খাবার হরিণ, বানর, শূকর ও শজারুর বংশ বৃদ্ধি এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে এই গবেষণা। গবেষণার ফলাফল নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে আগামী বছরের মাঝামাঝি।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় বাঘসহ ৫টি বন্যপ্রাণীর রোগ নির্ণয়ে পাঁচ সদস্যের একটি গবেষক দল বর্তমানে বনে কাজ করছে। গত ৪ থেকে ২৮ মার্চ বনের চারটি রেঞ্জের ৬৫টি গবেষণা প্লট থেকে তারা নমুনা হিসেবে এসব প্রাণীর মল, পশম, হাড়, মৃত প্রাণীর রক্ত প্রভৃতি সংগ্রহ করেন। গবেষণা প্লট থেকে মোট ২৫০টির মতো নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এখন সিলেট, ময়মনসিংহ ও গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩টি ল্যাবে এ নমুনাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
গবেষক দলের প্রধান সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক সুলতান আহমেদ জানান, এসব প্রাণী কোনো ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত কিনা এবং সংক্রামক রোগ আছে কিনা, গবেষণায় সে তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়া অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত আছে কিনা তাও জানা যাবে। রোগাক্রান্ত থাকলে প্রাণীগুলোকে রোগমুক্ত রাখতে পদক্ষেপ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, সুন্দরবনে মাঝে মধ্যে কিছু বাঘ মারা যায়, পরে মরদেহ উদ্ধার হয়। কিন্তু মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায় না। গবেষণায় প্রাণীগুলো কী কী রোগে আক্রান্ত তা নির্ণয়ের পাশাপাশি রোগের কারণও নির্ণয় করা হবে।
সুন্দরবনে বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে সুন্দরবনের মধ্যে নদীগুলো উত্তাল রয়েছে। সে কারণে এখন মাঠ পর্যায়ের নমুনা সংগ্রহের কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ল্যাবের কাজ চলমান আছে। আগামী নভেম্বরে আরও বড় পরিসরে ১৫ দিন নমুনা সংগ্রাম কার্যক্রম চালানো হবে।
বনবিভাগ জানায়, সুন্দরবনের কাছাকাছি লোকালয়ের কুকুর ও বিড়ালের রক্ত নমুনা হিসেবে সংগ্রহ করা হবে। বাঘ, হরিণ, বানর, শূকর ও সজারুর মধ্যে যে ধরনের সংক্রমণ হচ্ছে, লোকালয়ের প্রাণীরও সে ধরনের সংক্রমণ হচ্ছে কিনা, গবেষকরা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।
এ ব্যাপারে খুলনার সুন্দরবন একাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, দেশের ইতিহাসে বনে থাকা কোনো প্রাণীর রোগ নির্ণয়ের গবেষণা এটাই প্রথম। এটা আরও আগে সুন্দরবনে শুরু করা উচিত ছিল। তারপরও দেরিতে হলেও শুরু করার বিষয়টি ইতিবাচক। এই গবেষণা বন্যপ্রাণী টিকে থাকা ও বংশবৃদ্ধিতে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।