রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় পদ্মা নদীর চরে বাদাম ক্ষেতে কাজের সময় রাসেলস ভাইপার কামড় দেয় আলম বিশ্বাসকে (৫৫)। এ ঘটনা এক বছর অতিবাহিত হলেও এখনো পরিপূর্ণ সুস্থ হতে পারেননি তিনি। সাপে কামড়ানো হাতের আঙুল পচন ধরার পর বর্তমানে অস্বাভাবিক অবস্থায় রয়ে গেছে। তাই আলম বিশ্বাসকে এক হাতে সারতে হয় যাবতীয় কাজ।
শুক্রবার দুপরে উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের কালীদাসখালী চরে বসতবাড়ির আঙিনায় কথা হয় আলম বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বাড়িতে লালন-পালন করা দুটি গরুকে ধানের খড় খেতে দিচ্ছিলেন। সেই কাজগুলো আলম বিশ্বাস ডান হাতে করছিলেন। আর বাম হাত আলতো করে গরু বাঁধা বাঁশের খুঁটির ওপরে রেখেছিলেন। তার দাবি— ‘সাপে কামড়ানো আঙুল এখনো ব্যথা করে। হালকা আঘাতেই রক্ত ঝরে। কোনো দিন ভাবিনি, যে আঙুলের এ অবস্থা হবে।’
সাপে কামড়ানোর ঘটনার দিনে বর্ণনায় আলম বিশ্বাস বলেন, গত বছরের ৪ জুলাই রাসেলস ভাইপার কামড় দিয়েছিল পদ্মার চরের বাদামের জমিতে কাজের সময়। সেদিন ১৬ জন শ্রমিক নিয়ে ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করতে গিয়েছিলাম। সাপ আগে থেকে ছিল। কিন্তু দেখিনি। আগাছা পরিষ্কারের জন্য বাম হাত বাড়িয়েছি আর সাপে আঙুলে ছোবল দেয়। তখন হাতের ওপরে রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধন দেওয়া হয়। তখন লোকজন মিলে জীবিত সাপ ধরা হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের চিকিৎসকরাও বলেছিল— রাসেলস ভাইপার সাপে আমাকে কামড় দিয়েছে।’
চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাড়ে ৫ মাস চিকিৎসা নিয়েছি। রাজশাহী ও ঢাকায় মেডিকেলে চিকিৎসা ছাড়াও বাঘা ও কুষ্টিয়া ওঝার কাছে চিকিৎসা নিয়েছি। তবু এখনো পুরো সুস্থ হতে পারিনি। এখনো সাপের বিষের ব্যথা আছে আঙুলে। আমার সাহস ছিল, আর আল্লাহ হায়াত দিয়েছিল বলে বেঁচেছি। এবারও পদ্মার চরে ১৭ বিঘা জমিতে বাদামের চাষ করেছি। নদীতে বানের (বন্যা) পানি ঢুকে যাওয়ায় ৯ থেকে ১০ বিঘা জমির বাদাম তোলা হয়নি। শুধু সাপের ভয়ে পানিতে বাদাম তুলতে নিজে যায়নি। সাপের ভয়ে শ্রমিকও যায়নি। সেগুলো এখন পানিতে তলিয়ে গেছে।’
এখনো সুস্থ হতে পারেন দাবি করে আলম বিশ্বাস বলেন, ‘সাপে দংশনের পর বাম হাতের কনিষ্ঠ আঙুলে পচন ধরে। এর পরে ওষুধ খেতে খেতে কুকড়া অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। সাপে কামড়ানো আঙুলে হাত দিলে ব্যথা করে। এই হাতের আঙুলের সাহায্যে কোনো কাজ করা যায় না। একটু লাগলে (আঘাত) রক্ত বের হয়ে যায়। এখনো আঙুলের ভেতরে ঘা আছে। সাপের (রাসেলস ভাইপার) কামড়ে চিকিৎসা বাবদ তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই ধাক্কায় প্রাণে বেঁচে গেছে।’
আলম বিশ্বাসের স্ত্রী নাওজান বেগম বলেন, ‘গত বছর পদ্মার চরে সাপে কামড় দেয়। বাড়িতে নিয়ে আসার পরে তার চোখ মুখ নীল হয়ে গিয়েছিল। তার মুখে কথা ছিল না। তাকে দেখে আমি হাও মাও করে কান্নাকাটি শুরু করি। এই কথা মনে হলে এখনও আমার শরীরের লোম জেগে উঠে। সেই সাপটা বড় ছিল। শুধু এক নজর দেখেছিলাম সাপটি। তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বাঘার মনিকগ্রামে ওঝার কাছে। সেখানে ওঝা তাকে কিসের জানি পাতা খেতে দিয়েছিল। এক ঘণ্টা পরেতার জ্ঞান ফিরেছিল।
নাওজান বেগম আরও বলেন, ‘তার আগে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়েছিল। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে ১৫ দিন চিকিৎসা নেওয়া হয়। এরপর নেওয়া হয় কুষ্টিয়া জেলায়। এখন সে তেমন কোনো কাজ-কাম করতে পারে না। এই আঙুল নিয়ে কিছু ধরলে এখনো রক্ত পড়ে। ফলে এক হাতে সব কাজ করতে হয়।’
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু শাহীন চন্দ্রবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপ নিয়ে গবেষণা করছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আলম এক বছর আগে চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে তার কি অবস্থা তা আমরা জানি না।
সার্বিক বিষয় নিয়ে রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান এই চিকিৎসক।
এ বিষয়ে রাসেলস ভাইপার উদ্ধার নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রশিক্ষক বোরহান বিশ্বাস বলেন, দীর্ঘ সময় ব্যথা থাকে। তার আঙুলের সমস্যা হয়েছে। অনেকের চোখ ছাড়াও শরীরে বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষতি হয়।
এই প্রশিক্ষক ও রোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চান।
চকরাজাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু দেওয়ান বলেন, পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাড় ভেঙেছে। অনেক জায়গা প্লাবিত হয়েছে। ফলে সাপের আশ্রয়স্থানগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সাপ উঁচু স্থান বেছে নেওয়ার চেষ্টা করছে।