pension1

পেনশনে ‘প্রত্যয়’ স্কিম কী? বাতিল চেয়ে কেন আন্দোলন?

‘প্রত্যয়’। সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সরকারের নতুন কর্মসূচি। ১ জুলাইয়ের পর থেকে যোগদান করা স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বাধ্যতামূলকভাবে এই কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। এই কর্মসূচি ঘোষণার পর থেকেই আন্দোলনে নেমেছেন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচিতে ক্যাম্পাসগুলো অচল হয়ে পড়েছে। কেন তারা আন্দোলনে নামলেন আর ‘প্রত্যয়’ স্কিমেই বা কী আছে চলুন জেনে নিই।

গত ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেদিন থেকে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা ও সমতা নামে চারটি স্কিম চালু হয়। পরে গত ১৩ মার্চ রাষ্ট্রায়ত্ত, স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং এদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তা কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত হয় এবং ‌‘প্রত্যয়’ নামে স্কিম ঘোষণা করা হয়।

‘প্রত্যয়’ স্কিমে কী আছে?

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে-

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা কর্মচারীর মূল বেতনের ১০ শতাংশ বা সর্বোচ্চ ৫০০০ টাকা এর মধ্যে যা কম তা কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন থেকে কেটে রাখা হবে এবং সমপরিমাণ টাকা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া হবে।

“প্রত্যয়” স্কিমে মাসিক জমার বিপরীতে কর রেয়াত পাওয়া যাবে ও মাসিক পেনশনে আয়কর দিতে হবে না।

পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে পেনশনার মারা গেলে তার নমিনি অবশিষ্ট সময়কালের (মূল পেনশনারের বয়স ৭৫ বছর পর্যন্ত) জন্য মাসিক পেনশন পাবেন।

“প্রত্যয়” স্কিমে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মী এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য ধার্য করা মাসিক চাঁদা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একত্রে পেনশন কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করতে হবে।

পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইএফটি (Electronic Fund Transfer) এর মাধ্যমে পেনশনারের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মাসিক পেনশনের টাকা জমা হবে।

চাঁদাদাতা পেনশনযোগ্য বয়সে উপনীত হওয়ার আগে মারা গেলে জমাকৃত পুরো অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে এককালীন ফেরত দেয়া হবে।

রাষ্ট্রায়ত্ত, স্ব-শাসিত, স্বায়ত্তশাসিত বা সমজাতীয় প্রতিষ্ঠানে ১ জুলাই, ২০২৪ তারিখ বা এর পর নতুন কর্মচারী হিসেবে যোগদানকারীদের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান অবসর সংক্রান্ত বিধি-বিধান প্রযোজ্য হবে না।

পেনশনাররা আজীবন অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।

উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে যারা আগে থেকেই কর্মরত আছেন এবং যাদের চাকরি ১ জুলাই ২০২৪ তারিখের পর কমপক্ষে ১০ (দশ) বছর অবশিষ্ট আছে তারা স্বেচ্ছায় “প্রত্যয়” স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে সাধারণ ভবিষ্যৎ তহবিল (General Provident Fund) (জিপিএফ) এবং স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো প্রদেয় ভবিষ্যৎ তহবিলে (Contributory Provident Fund) (সিপিএফ) টাকা জমা রাখে। এর বিনিময়ে ১১ থেকে ১৩ শতাংশ হারে সুদ দেয় সরকার। যারা রাজস্ব খাত থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন জিপিএফে। আর যারা রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে বেতন পান, তারা টাকা রাখেন সিপিএফে। পেনশনে যাওয়ার পর এই টাকা পেয়ে থাকেন তারা।

বর্তমানে ৪০৩টি স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯০টির মতো প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ডের (সিপিএফ) আওতাধীন। সিপিএফ সুবিধার আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা এককালীন আনুতোষিক পেয়ে থাকেন, তবে কোনো পেনশন পান না।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ‘প্রত্যয়’ স্কিম নিয়ে বেশ কিছু বিষয় স্পষ্ট করে গত মঙ্গলবার (২ জুলাই) একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেয় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ।

এতে বলা হয়, কন্ট্রিবিউটরি পেনশন সিস্টেমে অংশগ্রহণকারীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এককালীন নয় বরং মাসিক পেনশনের যুক্তিসংগত পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে আনুতোষিকের ব্যবস্থা রাখা হয়নি বরং মাসিক পেনশনেরও কয়েকগুণ বেশি কাটা হলেও, একই পরিমাণ অর্থ প্রতিষ্ঠান জমা দেবে।

ফলে ৩০ বছর পর একজন পেনশনার প্রতি মাসে ১ লাখ ২৪ হাজার ৬৬০ টাকা হারে আজীবন পেনশন পাবেন। তার নিজ আয়ের মোট জমা করা অর্থের পরিমাণ ১৮ লাখ টাকা এবং তিনি যদি ১৫ বছর ধরে পেনশন পান সেক্ষেত্রে তিনি মোট ২ কোটি ২৪ লাখ ৩৮ হাজার ৮০০ টাকা পাবেন, যা তার জমার প্রায় সাড়ে ১২ গুণ বেশি। তাছাড়া পেনশনে যাবার পর কেউ ৩০ বছর জীবিত থাকলে, তার জমার প্রায় ২৫ গুণ অর্থ পেনশন পাবেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, পুরাতন পেনশন ব্যবস্থায় বেঁচে থাকলে পেনশনার আজীবন পেনশন পান এবং তার অবর্তমানে পেনশনারের স্ত্রী এবং প্রতিবন্ধী সন্তান আজীবন পেনশন পান। নতুন পেনশন ব্যবস্থায়ও পেনশনার আজীবন পেনশন পাবেন, তবে পেনশনারের অবর্তমানে তার স্ত্রী বা নমিনি পেনশনারের পেনশন শুরুর তারিখ থেকে ১৫ বছর হিসেবে যে সময় অবশিষ্ট থাকবে সে পর্যন্ত পেনশন পাবেন। যেমন- একজন পেনশনার অবসরে যাবার পর পেনশন ভোগরত অবস্থায় ৫ বছর পেনশন পেয়ে মারা গেলে তার স্ত্রী বা নমিনি আরও ১০ বছর পেনশন পাবেন।

এছাড়া বিজ্ঞপ্তিতে আরও যেসব বিষয়ের কথা বলা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-

* ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত যে সব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী চাকরিরত আছেন, তারা আগের মতো সব পেনশন সুবিধা পাবেন।

* বর্তমানে সরকারি পেনশনে ‘আনফান্ডেড ডিফাইন্ড বেনিফিট’ সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। ফলে, পেনশনের যাবতীয় ব্যয় প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ থেকে মেটানো হয়। তবে এবার ‘ফান্ডেড ডিফাইন্ড কনট্রিবিউটরি’ সিস্টেমের পেনশন ব্যবস্থায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বেতন থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাসিক জমার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

* ‘ফান্ডেড ডিফাইন্ড কনট্রিবিউটরি’ পেনশন সিস্টেমে কন্ট্রিবিউশন এবং বিনিয়োগ মুনাফার ভিত্তিতে একটি ফান্ড গঠিত হবে; তাই এটিকে দীর্ঘমেয়াদি টেকসই পেনশন ব্যবস্থা বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও ২০০৪ সাল থেকে ফান্ডেড কন্ট্রিবিউটরি পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

* কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিজ বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পদে বা উচ্চতর কোনো পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হলে, তিনি সার্ভিস প্রটেকশন ও পে প্রটেকশন প্রাপ্ত হন। তাই এ বিষয়টিকে নতুন নিয়োগ হিসাবে ধরা হয় না। তাই তিনি তার চলমান পেনশন ব্যবস্থার আওতায় থাকবেন।

* সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইনে ৬০ বছর বয়স থেকে পেনশন প্রাপ্তির উল্লেখ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছর বয়সে অবসরে যান। তাই ৬৫ বছর বয়স থেকে আজীবন পেনশন প্রাপ্ত হবেন। এক্ষেত্রে সরকার আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করবে।

* লাম্পগ্রান্ট ও পিআরএল অর্জিত ছুটি জমা থাকা সাপেক্ষে সুযোগ-সুবিধা আগের মতোই থাকবে।

এছাড়া অর্থ বিভাগের তথ্যমতে, পেনশনের সুবিধা আজীবন মিলবে বলে এ অংক আরও বাড়তে পারে। এ ছাড়া বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা হবে সেটা বাড়লে মাসিক পেনশনের পরিমাণও বাড়বে। এছাড়া পেনশন কর্মসূচি রাষ্ট্রীয় গ্যারান্টিযুক্ত হওয়ায় শতভাগ ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ। কোনো কর্মচারী পেনশন পাওয়ার উপযুক্ত হওয়ার পরের মাস থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের ব্যাংক হিসাবে মাসিক পেনশনের টাকা পেয়ে যাবেন। এটি মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে তাদের জানিয়ে দেয়া হবে। পেনশন পেতে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো দপ্তরে যাওয়ার বা কোনো ধরনের প্রমাণ দেখানোরও প্রয়োজন হবে না।

শিক্ষকরা কেন আন্দোলন করছেন, তাদের যুক্তি কী কী?

‘প্রত্যয়’ স্কিম ঘোষণার পর থেকেই ক্ষুব্ধ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকা আন্দোলনে যোগ দেয় অন্তত ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীরা। এই স্কিম বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস-পরীক্ষার পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজ, সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়ামসহ সব কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অচলাবস্থা বিরাজ করছে উচ্চশিক্ষার এসব প্রতিষ্ঠানে। এতে সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও শিক্ষকরা বলছেন, তারা পরবর্তীতে বিশেষ ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেবেন। তবে চলমান আন্দোলনকারী শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনাও হয়নি।

গত ৩০ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন ফটকে এক সংবাদ সম্মেলনে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া। এর পর সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা একে একে এই কর্মসূচিতে যোগ দেন।

অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‌বৈষম্যমূলক ও মর্যাদাহানিকর প্রত্যয় স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাহার, শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তন এবং প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

প্রত্যয় স্কিমে যেসব সুবিধা কমবে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা-

* বিদ্যমান পেনশন স্কিম অনুযায়ী, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে পেনশন পান সে জন্য বেতন থেকে কোনো টাকা কাটা হয় না। নতুন স্কিমে মূল বেতনের ১০ শতাংশ কাটা হবে।

* বিদ্যমান ব্যবস্থায় কেউ অধ্যাপক পদ থেকে অবসরে গেলে গ্র্যাচুইটি পান ৮০ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, নতুন স্কিমে সেটি পাওয়া যাবে না।

* অবসরে গেলে অধ্যাপকরা এখন পেনশন বাবদ মাসে ৪৫ হাজার ৭৯০ টাকা পান; যার বিপরীতে বেতন থেকে কোনো টাকা কাটা হয় না।

* প্রত্যয় স্কিমে বেতন থেকে কেটে ও প্রতিষ্ঠানের টাকায় মানে পেনশন পাওয়া যাবে ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এককালীন কোনো টাকা পাবেন না পেনশনাররা।

* বর্তমানে প্রতি বছর পেনশনে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট হয়, প্রত্যয় স্কিমে সেটি বাড়বে না।

* বিদ্যমান ব্যবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৬৫ বছরে, কর্মকর্তারা ৬২ এবং কর্মচারীরা ৬০ বছরে অবসরে যান। নতুন ব্যবস্থায় সবাইকে অবসরে যেতে হবে ৬০ বছর বয়সে।

* বিদ্যমান ব্যবস্থায় শিক্ষকরা অর্জিত ছুটির বিপরীতে টাকা পেলেও সেই ব্যবস্থা নেই নতুন পেনশন স্কিমে।

* বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীরা চিকিৎসা ভাতা, উৎসব ও বৈশাখী ভাতা কিংবা এলপিআর সুবিধা পান। কিন্তু নতুন পেনশন স্কিমে সেটি থাকবে কি না স্পষ্ট করা নেই।

সর্বজনীন পেনশনের বৈশিষ্ট্য এবং অন্য স্কিমসমূহ:

সরকার এরই মধ্যে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করে কার্যক্রম শুরু করেছে। যে কোনো ব্যক্তি www.upension.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করে সহজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন। অনলাইন ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড/ডেবিট কার্ড ও মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) এর মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে পারেন। নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন হলে সাবস্ক্রাইবারকে upension সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি ইউনিক পেনশন আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়া হবে; যার মাধ্যমে লগইন করে একজন সাবস্ক্রাইবার তার পেনশন (কর্পাস) হিসাবে জমার পরিমাণ, প্রাপ্ত লভ্যাংশ ইত্যাদি সরাসরি দেখতে পারেন।

অনলাইন জ্ঞান সীমিত বা অনলাইনে এক্সেস নেই এমন যে কেউ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার, ইন্টারনেট ক্যাফে কিংবা অন্য কারও সহায়তায় নিবন্ধন করে ফেলতে পারবেন। যদি কারো অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা না থাকে তবে সে সোনালী বা অগ্রণী ব্যাংকের যে কোনো ব্রাঞ্চের কাউন্টারে গিয়ে সহজেই টাকা জমা দিতে পারেন।

সর্বজনীন পেনশনের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের ঊর্ধ্ব বয়স্ক একজন সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দিয়ে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।

বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোনো বাংলাদেশি এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

পেনশনে থাকাকালীন ৭৫ বছর বয়স পূর্ণ হওয়ার আগে মারা গেলে পেনশনারের নমিনি ৭৫ বছর পূর্ণ হওয়ার অবশিষ্ট সময় পর্যন্ত পেনশন পাবেন।

চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেয়ার আগে মারা গেলে জমাকৃত টাকা মুনাফাসহ তার নমিনিকে দেয়া হবে।

চাঁদাদাতা নিজের জমাকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ঋণ হিসাবে তুলতে পারবেন।

পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসাবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়ার যোগ্য হবেন এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়কর মুক্ত থাকবে।

নিম্ন আয়সীমার নিচে থাকা নাগরিকদের অথবা অসচ্ছল চাঁদাদাতার ক্ষেত্রে পেনশন তহবিলে মাসিক চাঁদার একটি অংশ সরকার অনুদান হিসাবে দেবে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদার হার এবং স্কিম পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে।

পেনশনারদের প্রদত্ত চাঁদার টাকা বিনিয়োগ বিধিমালার আওতায় সর্বোচ্চ নিরাপদ ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রাপ্য রিটার্নের ভিত্তিতে পেনশনের মাসিক পরিমাণ নির্ধারিত হবে।

সর্বজনীন পেনশনের স্কিমসমূহ:

প্রবাস (প্রবাসীদের জন্য):

বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোনো বাংলাদেশি তার ইচ্ছা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রায় পরিশোধের শর্তে নির্ধারিত হারে চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রবাস থেকে দেশে ফেরার পর সমপরিমাণ অর্থ দেশীয় মুদ্রায় পরিশোধ করাসহ প্রয়োজনে স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন।

পেনশন স্কিমের মেয়াদ পূর্তিতে পেনশনার দেশীয় মুদ্রায় অর্থাৎ টাকায় পেনশন পাবেন। এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ২০০০/-, ৫০০০/-, ৭৫০০/- এবং ১০০০০/- টাকা। প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশে অবস্থানরত তাদের পরিবারের সদস্যদের (বাবা, মা, ভাই, বোন, স্বামী বা স্ত্রী) নামেও পেনশন স্কিম (সুরক্ষা) চালু করতে এবং মাসিক জমা পরিশোধ করতে পারবেন।

প্রগতি (ব্যক্তি মালিকানাধীন/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের জন্য):

ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি/কর্মচারী বা প্রতিষ্ঠানের মালিক নির্ধারিত হারে চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তাদের কর্মচারীদের জন্য এই স্কিমে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে স্কিমের চাঁদার ৫০% কর্মী এবং বাকী ৫০% প্রতিষ্ঠান দেবে।

এক্ষেত্রে upension সিস্টেমে সহজেই কোম্পানির নিবন্ধনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। অতঃপর কোম্পানির কর্মকর্তা/কর্মচারীরা নিবন্ধন করবেন। কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ না করলেও, উক্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারী নিজ উদ্যোগে এককভাবে এই স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।

এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ২০০০/-, ৩০০০/-, ৫০০০/- এবং ১০০০০/- টাকা।

সুরক্ষা (স্বকর্মে নিয়োজিতদের জন্য):

কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সকল অনানুষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত যেকোনো ব্যক্তি নির্ধারিত হারে চাঁদা দেয়ার মাধ্যমে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১০০০/-, ২০০০/-, ৩০০০/- এবং ৫০০০/- টাকা।

সমতা (স্বকর্মে নিয়োজিত অতি দরিদ্রদের জন্য):

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক, সময় সময়, প্রকাশিত আয় সীমার ভিত্তিতে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের মানুষ [যাদের বর্তমান বার্ষিক আয় সীমা ৬০ হাজার টাকার নিচে, তবে বার্ষিক আয়ের সমর্থনে কোনো প্রকার প্রমানক দাখিলের প্রয়োজন নেই] তফসিলে বর্ণিত হারে চাঁদা দিয়ে এই স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন।

এই স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১০০০/- টাকা, যার ৫০০ টাকা চাঁদাদাতা প্রদান করবেন এবং বাকি ৫০০ টাকা সরকার অনুদান হিসেবে দেবে।

Scroll to Top