mahbub hasan

দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব

দুর্নীতির বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, দুর্নীতিবাজদের পক্ষে সহানুভূতি দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। সোমবার (১ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।

সরকারি চাকরিজীবীদের দুর্নীতি নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, দেশের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসেবে এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন,

আমি জানি না, আপনারাও স্বীকার করবেন কিনা, সেটা হচ্ছে দুর্নীতি তো সবাই করে না। একটা অফিসের সবাই কী দুর্নীতিবাজ? হাতে গোনা কয়েকজন। সেই হাতে গোনা কয়েকজনের জন্য বাকি সবাই বিব্রত হন।

‘সরকারের তরফ থেকে অবস্থান পরিষ্কার করা হয়েছে, দুর্নীতির বিষয়ে কোনো সহানুভূতি দেখানো হবে না এবং দেখানো হচ্ছে না। এটা আপনারা খেয়াল করেছেন। আমরা সেটাই অনুসরণ করছি। সেটাই আমরা সিরিয়াসলি ফলো করছি। আপনি বলতে পারেন, এর ফাঁকে ফাঁকে কেন হচ্ছে? দেখেন প্রথমে আমি যদি বলি, এতো কাঠামোর মধ্যে থাকার পরেও দুর্নীতি হচ্ছে। এটা সব জায়গায় হয়। সব কাঠামোর মধ্যেই যারা খুবই দুষ্টু চিন্তার মানসিকতার, তারা এ কাজ করতে চায়,’ যোগ করেন তিনি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরও বলেন, ‘কিন্তু আমরা এতটুকু দেখতে পাচ্ছি, যখনই এ বিষয়টি সরকারের নজরে আসে। সরকারের তরফ থেকে কোনো প্রশ্রয় দেয়া হয় না। সরকারের সব যন্ত্র, প্রশাসন যন্ত্র দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে কোনো বাধা কিংবা প্রশ্ন উত্থাপন করছে না। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের সব মেকানিজম (কলাকৌশল) সহযোগিতা করছে।’

মন্ত্রণালয়গুলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না- দুদক চেয়ারম্যানের এ মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুব হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সচিবরা এ বিষয়ে ভালো জবাব দিতে পারবেন। আপনারা যদি প্রতিটি মন্ত্রণালয় দেখেন, দুর্নীতির বিরদ্ধে অভিযোগ এলে নানাভাবে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিংস একটা আছে।’

‘কেবল দুর্নীতি না, দুর্নীতির বাইরেরও অনেক বিষয়ের বিচার আমরা সেখানে করি। শৃঙ্খলাজনিত থাকে, নৈতিক স্খলনের বিষয়াদি থাকে। দুর্নীতি তার একটি অংশ। আমার কাছে এই তথ্য নেই যে কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এ রকম আমার নজরে এলে আমি আবার তদন্তের ব্যবস্থা করব’, যোগ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতির বাকি অংশগুলোর জন্য আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান আছে। আলাদা এজেন্সি আছে। প্রত্যেকেই কাজ করছে। তাদের কাছে প্রমাণযোগ্য তথ্য এলে সিরিয়াসলিভাবে সেটা নিয়ে নামে। কাজের চাপ, লোকবলের অভাব ও রিসোর্সের সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হয় যে কোন কাজটা আগে করব। কারণ দশটা অভিযোগ থাকলে আমাদের আগে নির্ধারণ করতে হয়, কোন কাজটা আগে করব। দশটি কাজই তো আমরা একসঙ্গে করতে পারছি না।’

তদন্তে রিপোর্টে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরেও ভূমি মন্ত্রণালয়ের এক সার্ভেয়ারকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এ সব বিষয়ে কিছু বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হবে। দুদক কিংবা অন্য একটি আদালত যেভাবে কাজ করে, ডিপার্টমেন্টাল কাজ কিন্তু সেভাবে না। আমি যখন শৃঙ্খলাবিধির আওতায় পদক্ষেপ নেই, আর দুদকের পদক্ষেপ একরকম না। এই বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে।’

‘কারও বিরুদ্ধে তদন্ত যখন দুর্নীতি হিসেবে সাব্যস্ত হয়, আমাকে তখন একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া মানতে হচ্ছে। আমি তো তাকে জেলে পাঠাই না। তাকে বরখাস্ত কিংবা চাকরিতে রেখে তার বিরুদ্ধে ডিপি চালু করি। ডিপি চালু আছে, আবার আপনি যদি বলেন, সে এখনো চাকরি করছে? এটা জবাব আমি কীভাবে দেব? আমার বিধানই এমন। তাকে চাকরিতে রেখেই ব্যবস্থা নিতে হবে,’ যোগ করেন মাহবুব হোসেন।

তিনি বলেন, ‘এখন দুর্নীতির পরেও সাসপেন্ড কেন করা হয়নি, সেটা হয়তো সেই কর্তৃপক্ষ জবাব দিতে পারবে। তবে আপনি উদহারণ দিয়েছেন, আমি খোঁজ নেব, তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রক্রিয়া চলমান আছে কী নেই। আপনি বলছেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা বলছেন, সে দোষী, তার চাকরি পুনর্বহাল হবে। এটি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, ‘আমার চাকরি জীবনের অভিজ্ঞতায় বলছি, তার ডিপার্টমেন্টাল প্রসিডিংস কোনো না কোনো জায়গায় এসে থেমে গেছে। হয়তো মামলা থামিয়ে দেয়া হয়েছে। অথবা প্রাথমিক তদন্তে এসেছে, আবার পূর্ণাঙ্গ সুনির্দিষ্ট তদন্তে তখন হয়তো পূরণ হয়নি। তখন হয়তো বলা হয়েছে তিনি দায়ী না। সেটা হতে পারে। কিন্তু তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু বহাল তবিয়তে চাকরি করবে-এটা প্রশাসনে বিরল ঘটনা।’

Scroll to Top