চারদিকে বন্যার পানি। কোনো কোনো সড়কে নৌকা চলছে। পানি আছে মানুষের বসতঘর, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। যাঁদের বসতঘরে পানি, তাঁরা আছেন বেশি কষ্টে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। কেউবা পরিবার নিয়ে উঠেছেন হোটেলে। আবার কেউ কেউ আছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
বুধবার দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সুনামগঞ্জের শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
প্লাবিত হওয়া এলাকার লোকজন বলছিলেন তাঁদের দুর্ভোগের কথা। এর মধ্যে শহরের জেলরোড এলাকার ব্যবসায়ী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মজিদ আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘ওখন পরতি বছর (প্রতিবছর) সুনামগঞ্জে বন্যা অয়। পাইরা ঢলে সবতা শেষ করি দেয় (পাহাড়ি ঢলে সব শেষ করে দেয়)। আগে ত ইলা পরতি বছর বন্যা অইছে না। ওখন কেনে বছর বছর বন্যাত মানুষ কষ্ট পায়। এই দুর্ভোগ দেখি আমরার পিছ ছাড়ের না।’
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কেন্দ্র বলা হয় আলফাত স্কয়ারকে। সেখান থেকে পূর্ব দিকে একটি সড়ক গেছে উকিলপাড়া, কাজীর পয়েন্ট, ষোলঘর হয়ে একেবারে পৌর শহরে শেষ প্রাপ্ত নবীনগর এলাকা পর্যন্ত। এই সড়কের উকিলপাড়া থেকে শুরু করে নবীনগর পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে। কাজীর পয়েন্ট থেকে সদর হাসপাতাল সড়ক, জেলা ক্রীড়া সংস্থার মোড় থেকে হাসননগরমুখী সড়কেও বন্যার পানি দেখা যায়।
সুনামগঞ্জ শহরের একটি উল্লেখযোগ্য আবাসিক এলাকা নতুনপাড়া। বহু মানুষের বাস এখানে। এই এলাকার মূল সড়কে নৌকায় মানুষ চলাচল করতে দেখা গেছে। সড়কে কথা হয় স্থানীয় বিনয় রায়ের সঙ্গে। বিনয় বলেন, এ এলাকার বেশির ভাগ ঘরেই পানি। মানুষ যে কী দুর্ভোগে আছে, বলে বোঝানো যাবে না। তার পাশে থাকা কলেজশিক্ষার্থী সাইদুর রহমান বলেন, ‘শহরকে বন্যার কবল থেকে মুক্ত রাখতে একটা উদ্যোগ প্রয়োজন। শহর রক্ষা বাঁধ নিয়ে একটা আলোচনা আছে। কিন্তু সেটির কোনো অগ্রগতি নেই।’
কথা বলার সময় অনেকেই পাশ দিয়ে পানি ভেঙে চলাচল করছিলেন। শুধু নতুনপাড়া নয়, একইভাবে শহরের ষোলঘর, নবীনগর, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী, ফিরোজপুর, উকিলপাড়া, মুক্তারপাড়া, হাজীপাড়া, আরপিননগর, পশ্চিমবাজার, নতুনপাড়া, কালীপুর সমবায় সুপার মার্কেট, মধ্যবাজার, পশ্চিমবাজার এলাকাতেও বন্যার পানি রয়েছে। এসব এলাকায় অনেক দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে।
পানি তো কমছে না। আবার বলা হচ্ছে, ভারী বৃষ্টি হবে। পরিস্থিতির অবনতি হবে। মানুষ তো আতঙ্কের মধ্যে আছেন।
ফয়সল আহমদ, ষোলঘর, সুনামগঞ্জ কাজীর পয়েন্ট এলাকার ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, শহরের সড়কগুলোর মধ্যে এখানে পানি বেশি। দোকানপাটে পানি প্রবেশ করায় সেগুলো বন্ধ।
ষোলঘর এলাকার বাসিন্দা ফয়সল আহমদ বলেন, ‘পানি তো কমছে না। আবার বলা হচ্ছে, ভারী বৃষ্টি হবে। পরিস্থিতির অবনতি হবে। মানুষ তো আতঙ্কের মধ্যে আছেন।’
ষোলঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন আশপাশের বনানীপাড়া, বলাকা, ষোলঘর ও হাসননগর এলাকার শতাধিক পরিবার। বনানীপাড়ার শ্রমিক নাসির উদ্দিন আশ্রয় নিয়েছেন পরিবারের চার সদস্য নিয়ে। নাসির বলেন, ‘ঘরে কোমরপানি। বাচ্চারা ভয় পায়। তাই চইলা আইছি।’
হাসননগরের রেজিয়া বেগম বলেন, ‘পানি বাড়ের, মানুষ আরও আইরা (পানি বাড়লে মানুষ আরও আসবে)। পরতি বছর আমরা গজবও পড়ি।’ একই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক মমিন মিয়া জানান, এলাকায় যে বসতিতে থাকতেন, সেটিতে এখন হাঁটুপানি। তার সঙ্গে আরও তিন-চারটি পরিবার আছে। সবাই আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন।
শহরের তেঘরিয়ায় এলাকায় গিয়েও রাস্তাঘাট ও মানুষের বসতঘরে পানি দেখা গেছে। এ এলাকার কাউন্সিলর আহসান জামিল বলেছেন, অনেক ঘরবাড়িতে পানি। মানুষজনকে এলাকার স্কুল ও মাদ্রাসায় নেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে আছে।
শহরের মধ্যবাজার এলাকার ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম জানান, এটি শহরের উল্লেখযোগ্য ব্যবসার কেন্দ্র। অনেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে। এতে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পানি আরও বাড়লে শহরের ব্যবসায়ীদের ক্ষতি বাড়বে।