রাজধানীতে তিন উপায়ে মোটরসাইকেল চুরির তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এগুলো হলো, দিনের বেলায় পার্কিং বা রাস্তা থেকে চুরি, রাতের বেলায় বাসাবাড়ির গ্যারেজ থেকে চুরি এবং শোরুম থেকে বা অনলাইনে প্রতারণার মাধ্যমে চুরি। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এসব তথ্য।
পুলিশ বলছে, ১৫ থেকে ২০টি গ্রুপ ভাগ হয়ে পুরো রাজধানী দাপিয়ে বেড়ায় এই তিন শ্রেণির চোর, যা সংখ্যায় শতাধিক। এর বাইরে রয়েছে চোরাই মোটরসাইকেল ক্রেতা, যাদেরকে বলা হয় মিডফিল্ডার। এই চক্রে আছেন অন্তত ২০ জন।সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, এক যুবক কখনো মূল সড়কে, কখনো অলিগলিতে বিরামহীন ছুটে চলছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবকের নাম হৃদয় হোসেন। অকারণে নয়, সুনির্দিষ্ট টার্গেট তাড়া করে হৃদয়কে। তার চোখ আটকায় পার্কিং করা মোটরসাইকেলে। মোবাইল কানে নিয়ে পায়চারি করতে থাকেন টার্গেটকৃত মোটরসাইকেলের আশপাশে। কখনো আবার বসেন সেটির ওপর। তারপর সুযোগ বুঝে মাস্টার চাবি ব্যবহার করে মোটরসাইকেল নিয়ে চম্পট।
পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, এভাবে রাজধানীতে দিনের বেলায় পার্কিং বা রাস্তা থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে চার থেকে পাঁচটি গ্রুপ। প্রতিটি গ্রুপে সদস্য সংখ্যা পাঁচ থেকে ছয় জন। মানিক, রেজা, মমিন, আমিরসহ অন্তত ২০ জনের বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল চুরির একাধিক মামলা রয়েছে বিভিন্ন থানায়।
এ ছাড়া রাতের বেলা বাসার গ্যারেজ ভেঙে রাজধানীতে হরহামেশাই চুরি হয় মোটরসাইকেল। এক্ষেত্রে সাধারণত বেছে নেয়া হয় ওই ধরণের বাসা, যেখানে নেই কোনো নিরাপত্তারক্ষী। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাচালক, সবজিবিক্রেতাসহ ভাসমান লোকদেরকে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয় চোরচক্র। তাদের কাজ রেকি করা। এ ধরণের চুরিতে ঢাকায় কাজ করে পাঁচ থেকে ছয়টি গ্রুপ। সদস্য সংখ্যা ৪০ এর বেশি।
আর প্রতারণার মাধ্যমে মোটরসাইকেল চুরি নতুন একটি ধরণ। এই ধরণের চুরিতে অনলাইনে বাইক বিক্রেতাদের টার্গেট করা হয়। ট্রায়াল দেয়ার কথা বলে বাইক নিয়ে পালিয়ে যায় চোর। সাধারণত মোটরসাইকেল চালানোতে দক্ষ ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হয় এক্ষেত্রে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার হাসান মুহাম্মদ মুহতারিম সময় সংবাদকে বলেন,
কেউ তার পুরনো মোটরসাইকেলটি বিক্রি করে দিতে অনলাইনে বিজ্ঞাপন দিলে চোর চক্রটি বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে। নিজেদেরকে আগ্রহী ক্রেতা পরিচয় দিয়ে সাক্ষাৎ করে। মোটরসাইকেলটি ট্রায়াল দেয়ার নাম করে নিরুদ্দেশ হয়ে যান তারা।
‘গড়ে আমরা তিন ধরনের মোটরসাইকেল চুরি সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। বিভিন্ন সময় মোটরসাইকেল চুরি প্রতিহত করতে অভিযান চালিয়েছি। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে চুরির তিনটি ধরন পেয়েছি’, যোগ করেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
জেনেশুনে যারা চোরাই মোটরসাইকেল ক্রয় করেন, তাদেরকে বলা হয় মিডফিল্ডার। ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, কেরাণীগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়াসহ আশপাশের এলাকা থেকে চোরাই মোটরসাইকেল কিনতে তারা ঢাকা আসেন। নিজস্ব গোডাউনে কিছুদিন রাখার পর তারা আবার সীমান্তবর্তী এলাকার ক্রেতাদের কাছে সেগুলো বিক্রি করেন। এরকম অন্তত ১০ থেকে ১২ জনের তথ্য আছে পুলিশের খাতায়।
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ কমিশনার হাসান মুহাম্মদ মুহতারিম বলেন,
এক ধরনের মধ্যস্বত্বভোগী ক্রেতা আছেন, যাদের কাছে মোটরসাইকেলগুলো যায়। তাদের অবস্থান ডিএমপি এলাকার আশেপাশে, যেমন- কেরাণীগঞ্জ, ডেমরা, সাভার, আশুলিয়া, মানিকগঞ্জ, নরসিংদীতে মধ্যস্বত্বভোগী ক্রেতা দেখতে পাই। চোর চক্র তাদের নাম দিয়েছে মিডফিল্ডার। এই মিডফিল্ডাররা দীর্ঘদিন ধরে চোরাইকৃত মোটরসাইকেলগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লুকিয়ে রাখেন। তারা যদি মনে করেন যে পুলিশ এই মোটরসাইকেল উদ্ধারে তৎপরতা কমিয়ে দিয়েছে, তখন সেরকম একটা সুবিধাজনক সময়ে তারা এই মোটরসাইকেলগুলো বিক্রির জন্য সীমান্তবর্তী এলাকায় পাঠিয়ে দেন।
তিনি জানান, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, ভোলাসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রেতাদের অন্যতম টানা ফারুক। দেশের চোরাই মোটরসাইকেলের ৪০ ভাগ যায় ফারুকের কাছে।
পুলিশের এ কর্মকর্তা আরও জানান, অনেকেই আবার জেলে গিয়ে মোটরসাইকেল চোরদের সঙ্গে পরিচিত হয়ে জামিনে বের হয়ে চোরচক্রে যোগ দেয় এমন তথ্যও উঠে এসেছে তদন্তে।