jahangir

মন্ত্রীর কাছে চারটি দাবি জানান পাটচাষিরা, পেলেন শুধু আশ্বাস

ফরিদপুরে এক মতবিনিময় সভায় পাটচাষিরা পাট চাষ, পচানো ও বিপণন বিষয়ে চারটি দাবি তুলে ধরেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের কাছে। উত্তরে পাটমন্ত্রী চাষিদের নানা আশ্বাস দিয়েছেন। আজ শনিবার বেলা তিনটার দিকে ফরিদপুরের শিশু একাডেমি মিলনায়তনে পাট খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজনের সঙ্গে এ মতবিনিময় সভা করা হয়।

মতবিনিময় সভায় কৃষকদের পক্ষে বিভিন্ন প্রশ্ন ও সমস্যার কথা তুলে ধরেন ফরিদপুরের সালথার পাটচাষি মোস্তাক মোড়ল, নগরকান্দার পাটচাষি রাশেদ মোল্লা ও সিরাজ খলিফা। ওই তিন কৃষক মন্ত্রীকে জানান, পাট চাষ করে তাঁরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। প্রতি বিঘায় সব মিলিয়ে পাট চাষে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। পাটের দাম কম থাকায় ৫০ হাজার টাকা ওঠে। ২০ হাজার টাকা তাঁদের লোকসান হয়। পানি না থাকায় ভ্যানে করে অনেক দূরে নিয়ে জাগ দিতে হচ্ছে। এর জন্য শ্রমিকদের পেছনে অনেক খরচ হচ্ছে। অনেক সময় টাকা দিয়েও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না।

কৃষকেরা আরও বলেন, পাটের দাম না বাড়ালে, পানিসংকট না কাটানো গেলে এ অঞ্চলের পাটচাষিরা বাধ্য হয়ে ভুট্টা চাষের দিকে ঝুঁকবেন। তাই সরকারকে এদিকে নজর দিতে হবে। তবে তাঁরা যুগ যুগ ধরে পাট চাষ করেছেন, সুযোগ-সুবিধা পেলে পাট চাষই করতে চান। এ ছাড়া রাস্তাঘাট অনেক খারাপ। সেগুলো ঠিক করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ‘পাট থেকে পাটজাত পণ্য তৈরি করে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ফরিদপুর থেকে পাট চাষের সমস্যা জেনে সমাধানের পথ বের করার জন্য ফরিদপুরে এসেছি। ফরিদপুরে শুধু বেশি পাট উৎপাদিত হয়, তা নয়, এখানে উচ্চ মানের পাটও উৎপাদিত হয়। স্বল্প জায়গায়, স্বল্প সময়ে কীভাবে পাট জাগ দেওয়া যায়, আমরা সে ব্যবস্থা করব…আমরা বসে নেই। নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। কীভাবে কম পানিতে পাট জাগ দেওয়া যায়, কীভাবে পাট না পচিয়ে আঁশ ছাড়ানো যায়, এসব এক্সপেরিমেন্ট (পরীক্ষা) চলছে। কীভাবে কী করা যায়, নতুন প্রযুক্তিকে সঙ্গে নিয়ে পাটের উন্নয়নে কী করা যায়, তা আমরা পরীক্ষা করছি। আমরা সফলতা পাব।’

মন্ত্রী আরও বলেন, উন্নত জাতের পাট ও বীজ উৎপাদনে পাট গবেষণাকেন্দ্রের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। বাজারে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে একই দামে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বাঁচাতে পলিথিন ব্যবহার পুরোপুরি কমাতেই হবে।

সভায় উপস্থিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রহমান বলেন, ‘পাট চাষে ফরিদপুর দেশসেরা। কিন্তু এখানকার কৃষকেরা বিশেষ করে সালথার একজন কৃষক বললেন, তাঁদের কাঁচা রাস্তা পাকা করা ও কিছু জায়গায় ছোট ছোট সেতু দরকার। আমি পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব সাহেবকে বলি, দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এসব রাস্তাঘাট-ব্রিজ দেওয়া যায় কি না, তা দেখার দরকার। পাশাপাশি পাট জাগ দেওয়ার জন্য যেসব সরকারি খাল–বিল আছে, তা খনন করে অন্য সময় মাছ চাষ করা হোক আর পাটের সময়ে পাট জাগ দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমার মন্ত্রণালয় সব সময় আপনাদের পাশে থাকবে।’

ফরিদপুরে পাটকলমালিক করিম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ‘পাট বাঁচায়া রাখতে হলে চাষিদের স্বার্থ সবার আগে দেখতে হবে। এক ব্যবসায় না পোষালে আমি অন্য ব্যবসায় চলে যাব। কিন্তু পাটচাষিদের তো সে সুযোগ নেই। তাঁদের সমস্যা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে।’

সভায় আরও বক্তব্য দেন ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা ও সালথা) আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ঝর্ণা হাসান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুর রউফ, পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জিনাত আরা, বিজিএমইএর সভাপতি আবুল হোসেন, পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম, ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নজরুল ইসলাম, ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইশতিয়াক আরিফ প্রমুখ। সভায় সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার।

এরপর ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার দেশ, স্মার্ট পাটশিল্পের বাংলাদেশ’—স্লোগানকে সামনে রেখে পাট অধিদপ্তরের উদ্যোগে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে বেলুন উড়িয়ে ও ফিতা কেটে তিন দিনব্যাপী বহুমুখী পাটপণ্যের মেলার উদ্বোধন করেন অতিথিরা। মেলায় ২৫টি স্টল বসেছে।

Scroll to Top