দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক। একজন থাকেন জাপানে, একজন কানাডায়। দেশে এলেন কদিনের জন্য। ভাড়া নেন ফ্ল্যাট। মাত্র একদিনের মাথায় চিরকুট লিখে প্রেমিককে খুন করে লাপাত্তা কানাডাপ্রবাসী নারী, যাকে এখন খুঁজছে পুলিশ।
রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফ্ল্যাট থেকে আরিফুল ইসলাম নামে একজনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধারের পর এমন তথ্যই দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের ধারণা, দীর্ঘদিনের ক্ষোভ থেকে এ হত্যাকাণ্ড।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, নিহত আরিফুল জাপানপ্রবাসী। আর খুনে অভিযুক্ত প্রেমিকা পারভীন আক্তার কানাডাপ্রবাসী। পুলিশ জানায়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৭ দিনের জন্য একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন তারা দুজন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, গত ১৭ মে বিকেল সোয়া ৪টায় তারা সেখানে ঢুকেন। পরদিন ১৮ মে ভোর ৬টায় তড়িঘড়ি করে বের হয়ে যান ওই নারী। এরপর আর কোনো খোঁজ নেই কারও।
শনিবার (১ জুন) অ্যাপার্টমেন্টের অফিস থেকে ফোন করে পুলিশকে জানানো হয়, দোতালার সেই ফ্ল্যাট থেকে একজনের গলিত মরদেহ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রাথমিক তদন্তে দেখা যায়, নিহত আরিফুল জাপানপ্রবাসী। পরিবারকে না জানিয়েই ১৭ মে দেশে আসেন তিনি। তার সঙ্গে যিনি ছিলেন তার নাম পারভীন আক্তার। তিনি কানাডাপ্রবাসী। বাসা ভাড়া নিতে পরিচয় দিয়েছিলেন স্বামী ও স্ত্রী হিসেবে।
রহস্যের এখানেই শেষ নয়। ঘটনাস্থলে একটি চিরকুটে স্পষ্ট করে লেখা আরিফকে হত্যার কারণ। চিঠিটি হত্যাকারীর লেখা বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। আবার দুজনেরই আলাদা সংসার থাকলেও ঘটনাস্থলে পাওয়া যায় একটি বিবাহের ঘোষণাপত্র, যা করা হয়েছে ২০২১ সালে। তিন বছর পার হলেও আরিফুলের পরিবার জানে না কিছুই।
নিহতের স্বজনরা জানান, গত ৩১ মে দুপুরে জাপানে পৌঁছার কথা ছিল আরিফুলের। বাসায় না পৌঁছায় সেখান থেকে তার গর্ভবতী স্ত্রী আরিফুলের মাকে ফোন করে জানানোর পর উদ্বেগ বাড়ে পরিবারটির মধ্যে। এদিকে, সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট জানায়, মরদেহের বুকে ও গলায় ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
তবে প্রশ্ন হচ্ছে, হত্যাকারী এত দ্রুত গেলেন কোথায়? পুলিশ বলছে, ১৬ মে পারভীন দেশে আসেন এবং ১৮ মে তার মোবাইলের সর্বশেষ অবস্থান দেখা গেছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
বাড্ডা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার রাজন কুমার সাহা সাংবাদিকদের বলেন, সবশেষ ১৮ মে সকালে পারভীন আক্তারকে ছোট একটা ভ্যানিটি ব্যাগসহ রুম থেকে বের হয়ে চলে যেতে দেখা গেছে। এরপর ওই রুমে আর কাউকে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি।
দায়িত্বে অবহেলা এবং সন্দেহজনক আচরণের কারণে অ্যাপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে বলে জানায়।