rain2

ভারী বর্ষণে ডুবেছে চট্টগ্রাম

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামে। এতে নগরীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। গতকাল রোববার দুপুর থেকে থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। আজ সোমবার ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখনো তা অব্যাহত আছে।

এই বৃষ্টিতে আজ সোমবার সকালে নগরীর নিচু এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পানি উঠতে শুরু করে। সকালে নগরীর প্রধান প্রধান সড়কসহ অলিগলির রাস্তা ডুবে যায়। মানুষের বাসাবাড়ি ও দোকানেও পানি ঢুকে।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে অতি ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। আজ সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি মৌসুমের বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতায় দ্বিতীয়বারের মতো ডুবেছে। এতে সকালে অফিসগামী ও জরুরি প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া লোকজন ভোগান্তিতে পড়েছেন। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল করছে কম। যেসব যানবাহন চলছে সেগুলোতে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকে।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা এমএইচএম মোসাদ্দেক জানান, সকাল ৯টা ২২ মিনিটে জোয়ার শুরু হয়। ভাটা শুরু হবে বিকেল ৩টা ১৬ মিনিটে।

গত ২৪ ঘন্টায় ২০৫ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আরও তিন থেকে চার ঘণ্টা এমন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা।

আজ সোমবার সকালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নাসিরাবাদ, নগরীর তিনপুলের মাথা, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেইট, ডিসি রোড, আগ্রাবাদ, হালিশহর, কে বি আমান আলী রোড, বাকলিয়া, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, মেহেদীবাগ, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, প্রবর্তক মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এসব এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটু পরিমাণ পানি উঠেছে। কোনো কোনো জায়গায় কোমর পানিও জমেছে।

নাসিরাবাদ এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমাদের আশপাশের এলাকা ৪ থেকে ৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অফিসমুখো মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।’

কামাল হোসেন নামের হালিশহর শামলী আবাসিক এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘হাঁটু সমান পানি মূল সড়কে। আবাসিকের ভেতরে এটি কোমর সমান।’ পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকা কিংবা প্রতিবন্ধকতার কারণে নিচু সড়কে পানি এভাবে জমে গেছে। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরবাসী।

নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় থাকেন ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল হাকিম। তার কর্মস্থল নগরীর তিনপুলের মাথা এলাকায়। দুই জায়গাতেই পানি উঠায় কর্মস্থলে যেতে ভোগান্তি হয়েছে। কিছু পথ হেঁটে কিছু পথ বাড়তি ভাড়া গুণে রিকশায় করে কর্মস্থলে গিয়েছেন। বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি ঢুকে যাওয়াকে নিয়তি হিসেবেই ধরে নিয়েছেন চকবাজারের চাক্তাইখাল পাড়ের বাসিন্দারা।

এখানকার মুহম্মদ আলী শাহ লেনের বাসিন্দা আবদুল হামিদ বলেন, ‘৩২ বছর ধরে ডুবছে আমাদের এলাকা। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। বাসা-বাড়িতে হাঁটুপানি। ঈদগাহ ময়দানে কোমর পানি। সকালে চক সুপারমার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখি, সেখানেও হাঁটুপানি।’

সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা লতিফুল হক কাজমি বলেন, ‘৪১টি ওয়ার্ডে জমে থাকা পানি যাতে দ্রুত নেমে যায়, এ জন্য ছোট ছোট টিম গঠন করে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চলছে৷’

চলতি মাসের ৬ তারিখেও নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছিল। ওই দিন বিকেলের টানা এক ঘণ্টা বৃষ্টিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নিচু এলাকাসহ অনেক এলাকা পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক।

এদিকে ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলায় চট্টগ্রাম বন্দর, বঙ্গবন্ধু টানেল, শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা করা হয় গতকাল রোববার। তবে বিমানবন্দরের কার্যক্রম ভোর ৫টা থেকে আবার শুরু করা হয়েছে।

Scroll to Top