পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে একটি ভোটকেন্দ্রে ফলাফল ঘোষণায় দেরি হওয়ার অভিযোগ তুলে ভোটকেন্দ্রে হামলা ও তিনটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে এক উপসচিব, দুজন পুলিশ সদস্য ও পোলিং কর্মকর্তার দুজন গাড়িচালকসহ মোট ছয়জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দুই যুবককে আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত আটটার মধ্যে ভোট গণনার সময় উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের দামানীগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), এক উপসচিব ও বিজিবির ব্যবহৃত তিনটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি ভোট পড়েছিল। এ জন্য গণনায় কিছুটা সময় লেগেছিল। এ সময় কেন দেরি হচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রথমে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা গোলাম আজম
ঘটনাস্থল থেকে আটক ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের বন্দীরাম এলাকার মিঠুন রায় ও একই ইউনিয়নের দামানীগ্রামের দীনবন্ধু রায় (৩০)। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সূত্রে জানা গেছে, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে দেবীগঞ্জ উপজেলায় দিনভর শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শালডাঙ্গা ইউনিয়নের দামানীগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট গণনা চলছিল। এ সময় ভোটের ফলাফল ঘোষণা করতে কিছুটা দেরি হওয়ায় বিক্ষুব্ধ জনতা লাঠিসোঁটা নিয়ে ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায়।
তারা ভোটকেন্দ্র লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও ছুড়তে থাকে। ঘটনার সময় নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু আউয়াল, পঞ্চগড় সদর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন, ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা গোলাম আজমসহ অন্য কর্মকর্তারা ভোটকেন্দ্রের ভেতরে ছিলেন।
এ বিষয়ে কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা গোলাম আজম বলেন, ‘কেন্দ্রটিতে মোট ৩ হাজার ২০০ জন ভোটারের মধ্যে ২ হাজার ২২৭ জন ভোটার ভোট দেন। সন্ধ্যার পর ভোট গণনার সময় বাইরে হাজারো মানুষ অপেক্ষায় ছিলেন। গণনার শেষে আমাদের ফলাফলও প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিল।
তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি ভোট পড়েছিল। এ জন্য গণনায় কিছুটা সময় লেগেছিল। এ সময় কেন দেরি হচ্ছে, এমন অভিযোগ তুলে বিক্ষুব্ধ জনতা প্রথমে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাই। এ পরিস্থিতিতে ভোটের ফলাফল শিট পোলিং এজেন্টদের দিয়ে আমরা সেখান থেকে চলে আসার চেষ্টা করি।’
গোলাম আজম আরও বলেন, ‘ওই সময় বাইরে থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল লোক আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা গাড়ি থেকে নেমে আবারও কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে পড়ি। পরে বিক্ষুব্ধ লোকজন গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় তাদের ছোড়া ইটপাটকেলে বেশ কয়েকজন আহত হন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আমরা সেখান থেকে চলে আসি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই কেন্দ্রে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী মদন মোহন রায় হেলিকপ্টার প্রতীকে ১ হাজার ৭৩টি ভোট পেয়ে প্রথম হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাসনাত জামান চৌধুরী আনারস প্রতীকে পেয়েছেন ৮৩৬ ভোট।
হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশের দেবীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রুনা লায়লা মুঠোফোনে বলেন, গণনার সময় হাজারখানেক লোক একত্র হয়ে গুজব ছড়ায়, কেন্দ্রের ভেতরে ভোটের ফলাফল কারচুপি হচ্ছে। সমর্থকেরা বলতে থাকেন, ‘রেজাল্ট যেটাই হোক আমরা মানব না; পুনরায় ভোট গণনা করতে হবে।’ পরে তাঁরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। ঘটনার সময় দুজনকে আটক করে এখন মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।