রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ভারত ও চীনের ভূমিকা মুখ্য উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, তাদের যদি এই বিষয়ে আরও বেশি করে যুক্ত করতে পারেন, তাহলে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘রোহিঙ্গা সংকট: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ওভারসিস করেসপন্ডেন্টস বাংলাদেশ (ওকাব) ওই সেমিনারের আয়োজন করে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা কূটনৈতিক পথ অবলম্বন করছি। একইসঙ্গে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে গেছি। আমরা গাম্বিয়া ও ওআইসির মাধ্যমে আইসিজেতে মামলা করেছি। সেই মামলায় এখন পর্যন্ত যে ফলাফল এসেছে, সেটি আমাদের পক্ষে।
গাম্বিয়া বলেছে, মামলা সঠিক পথে যাচ্ছে। আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত এই মামলার ইতিবাচক ফল আসবে। আমরা আশা করছি, আইসিজের মাধ্যমে একটি আন্তর্জাতিক চাপ মিয়ানমারের ওপর পড়বে। আমরা ক্রমাগতভাবে চেষ্টা করেছি, আন্তর্জাতিকভাবে যেসব দেশের প্রভাব মিয়ানমারের ওপর আছে, তাদের এই বিষয়ে যুক্ত করার।’
চলতি বছর উগান্ডায় মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে হাছান মাহমুদ বলেন, ওই বৈঠক থেকে তাঁর মনে হয়েছে, আন্তর্জাতিক সমালোচনা এড়ানোর জন্য হলেও মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন শুরু করতে চায়। কিন্তু মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রাখাইন প্রদেশে এখন যে পরিস্থিতি, সেখানকার সেনাবাহিনী পালিয়ে এখানে আসছে। যেখানে ওদের নিরাপত্তা বাহিনী পালিয়ে আসছে, এই পরিস্থিতিতে তো রোহিঙ্গাদের সেখানে ঠেলে দেওয়া যায় না।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ দিতে বলেছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের একমাত্র সমাধান তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন। শিবিরে তারা কিছু কাজ করছে। কিন্তু তাদের পুরোপুরি জীবিকা নির্বাহের নিশ্চয়তা আমরা কীভাবে দেব? শিবিরের ভেতরে আমরা সীমিত কিছু কাজের ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু শিবিরগুলো খুবই সংকীর্ণ ও জনাকীর্ণ। রোহিঙ্গাদের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করা সমাধান নয়। একমাত্র সমাধান হচ্ছে সব অধিকারসহ তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন।’
কিছু কিছু দেশ রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে স্বাগত জানাচ্ছে জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমি তাদের নাম বলতে চাই না। এখনো যারা মিয়ানমারে আছে, তারা যদি বাংলাদেশে এসে এসব দেশে যেতে চায়, তাহলে কী হবে? কানাডা, আমেরিকা, ইউকে কিছু রোহিঙ্গাদের নিয়ে যাচ্ছে। তারা সবাইকে কেন নিচ্ছে না?’
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, আন্তর্জাতিক চাপ যদি অব্যাহত রাখতে রাখা যায় এবং আইসিজে থেকে যদি পক্ষে একটি ভালো রায় আসে, তাহলে মিয়ানমারের ওপর চাপ আরও বাড়বে। তখন মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন শুরু করবে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ জাতিগত সংঘাত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে অজুহাত হিসেবে দাঁড় করানো উচিত নয়।
সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, রোহিঙ্গা সংকট এখনো বিশ্বব্যাপী একটি বড় সমস্যা। যত দিন যাবে, এ সমস্যার গভীরতা আরও বাড়বে। তাই শান্তিপূর্ণ উপায়ে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এর সমাধানে আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে একযোগে উদ্যোগী হতে হবে।
ওকাবের সভাপতি নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের কার্যকরী কমিটির সদস্য ফরিদ হোসেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের অব্যাহত অবস্থান বাংলাদেশের অর্থনীতি, জীববৈচিত্র্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে।
রোহিঙ্গারা মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান, সন্ত্রাসী তৎপরতা, পাচারের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। অনেকে মানব পাচারকারীদের শিকার হচ্ছেন ও শিবির থেকে পালিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে ভ্রমণের চেষ্টা করছেন। এমনকি তারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ও এনআইডি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, কক্সবাজারের শিবিরগুলোয় আরসাসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর কার্যক্রম বাড়ছে কি না, তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনকে বাধাগ্রস্ত করছে। সংখ্যার দিক থেকে বাঙালিরাই এখন উখিয়ায় সংখ্যালঘু। সেখান থেকে তারা শুধু টেকনাফ-কক্সবাজার নয় সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়ছে।