সিরাজগঞ্জে শহিদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফের পিস্তলের গুলিতে আরাফাত আমিন তমাল নামে এক ছাত্র আহত হয়েছেন।
গত সোমবার বিকালে অসময়ে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া নিয়ে ওই শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ পিস্তলসহ ওই শিক্ষককে আটক করে থানায় নিয়ে গেছে। ওই শিক্ষকের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগ করে কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, ডা. রায়হান শরিফ বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের কুপ্রস্তাব ও ভয়ভীতি দেখিয়ে আসতেন। এ বিষয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তাদের অভিযোগ, ডা. রায়হান কমিউনিটি মেডিসিনের শিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও ক্ষমতাবলে ফরেনসিক বিভাগের ক্লাস নেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, শুধু ক্লাসে নয়, প্রায় সময়ই তিনি পিস্তল নিয়ে চলাফেরা করেন। সোমবার বিকেলে ক্লাস চলাকালে দেশীয় পিস্তল ও ১০/১২টি ধারালো চাকু নিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করেন ওই শিক্ষক। এরপর হঠাৎ ক্লাসের মধ্যেই অষ্টম ব্যাচের (২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে গুলি করেন তিনি।
তারা জানান, আর্তচিৎকার শুনে সবাই এগিয়ে আসার পর ডা. রায়হান শরিফকে তালাবন্ধ করে রাখা হয়। আর তমালকে দ্রুত হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সোমবার তাদের ভাইভা চলাকালে ৪৫ জন শিক্ষার্থীর সামনে শিক্ষক রায়হান শরিফ তমালের ডান পায়ে গুলি করেন।
এ ঘটনার পর ডা. রায়হানের শাস্তির দাবিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকের বিচার দাবিতে আন্দোলন করছেন তারা। পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পাসে উপস্থিত রয়েছে।
সিরাজগঞ্জ সদর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘শহীদ মনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে গণ্ডগোলের খবর পেয়ে আমরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।
‘অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করে ইতোমধ্যে থানায় নিয়ে এসেছি। তার বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
শহীদ এম মুনসুর আলী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ মো. আমিরুল হোসেন বলেন, ‘শিক্ষক রায়হান শরীফ উগ্র মেজাজের মানুষ। তিনি প্রায়ই ক্যাম্পাসে অস্ত্র নিয়ে আসেন। আজকেও তিনি পিস্তল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনায় বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।’
তিনি বলেন, ‘বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে ওই শিক্ষক তমালের পায়ে গুলি করেন। তাকে আমাদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে সে আশঙ্কামুক্ত।’
হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাক্তার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আহত তমালের অস্ত্রোপচার সুসম্পন্ন হয়েছে। তাকে আমরা সারা রাত পর্যবেক্ষণে রাখব। সকালে তাকে বেডে দেয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘তমাল এখন শঙ্কামুক্ত; তবে একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এ ধরনের ঘটনা আমরা কখনওই আশা করিনি।’ সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রের পায়ে গুলি করেন শিক্ষক। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
‘অভিযুক্ত শিক্ষককে হেফাজতে নেয়া হয়েছে এবং তার সঙ্গে থাকা পিস্তল জব্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা নিয়ে শিগগিরই তাকে হাজতে প্রেরণ করা হবে।’ তবে কেন এই ঘটনা ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।