রাজধানীর গুলশান, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, মিরপুর, বসুন্ধরা ও উত্তরার প্রায় অর্ধশত রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। অভিযানে এসব রেস্তোরাঁ–ভবনে জরুরি বহির্গমন সিঁড়ি ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা রয়েছে কি না তা ঘুরে দেখেছে তারা। এ সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ভয়াবহ অনিয়ম নজরে আসায় কয়েকটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক ও কর্মীসহ অন্তত ৩৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
গত রোববার (৩ মার্চ) রাতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আটক ব্যক্তিরা হলেন- ধানমন্ডির হোয়াইট হল নামের রেস্তোরাঁর শামীম হোসেন তুহীন, ম্যারিটেজ ঢাকার খুরশীদ আলম, এ্যারিস্টোক্যাটের সাব্বির হোসেন, আদি কড়াই গোস্তের খালিদ হোসেন, দি লবি লাউঞ্জের মারুফ হোসেন, ইয়ামচা ডিস্ট্রিক্টের পুলক বিশ্বাস, ক্যাফে ডোলচের আশিক তালুকদার, ক্যাফে সাওপাওলোর শাহিন সারোয়ার, ক্যাপিট্যাল লাউঞ্জের রেদুয়ান আহম্মেদ, পার্ক এন্ড স্ট্রার্টের মিজানুর রহমান, খানাজের শরিফুল ইসলাম, ক্যাফে ইউফোরিয়ার আল আমিন, টুইন পার্কের আল আমীন মোস্তফা তালুকদার, স্টার দেশীর মেহেদী হাসান, ডিকে-১৩ এর রাসেল পালমা, বেস্টার প্রের আমিনুল ইসলাম রিফাত, চা-টাইপের সামিত আলম সিয়াম, চয়ন হালদার ও বিবিকিউ’র সুমিত রায়।
ঢাকা মহানগর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, রাত ১০টা পর্যন্ত আটক করা হয়েছে বিভিন্ন রেস্তোরাঁর ৩৫ কর্মীকে। তাদের মধ্যে কয়েকটি রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপকও রয়েছেন। এছাড়া যেসব রেস্তোরাঁয় ছোটখাট অনিয়ম পাওয়া গেছে তাদের মুচলেকা রেখে সতর্ক করা হয়।
তিনি বলেন, রাজধানীতে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন আছে কিনা, নিরাপদ স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করছে কিনা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটুকু, অগ্নি নির্বাপন যন্ত্র এবং ঝুঁকির বিষয়টি দেখা হয়।
রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশমুখসহ বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায় ভাটারা থানা পুলিশ। ভাটারা থানার ওসি মাইনুল হোসেনের নেতৃত্বে ওই এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ।
ভাটারা থানার ওসি বলেন, রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। অভিযানে দেখছি— রেস্টুরেন্টগুলোতে অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে কি না এবং রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করতে সংশ্লিষ্ট যেসব অনুমোদন প্রয়োজন সেগুলো রয়েছে কি না। অনিয়মের কারণে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটিকে সতর্ক করা হয়েছে। আমাদের অভিযান চলমান, অভিযান শেষে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এর ঠিক আগ মুহূর্তে গুলশানের অভিযানে কয়েকটি ভবনের রেস্টুরেন্টের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখে পুলিশ কর্মকর্তারা। ভবনগুলোতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা কিংবা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে, নিরাপদ প্রস্থানের রাস্তা আছে কি না পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়।
অগ্নি নির্বাপনের ব্যবস্থা ও অন্যান্য নিরাপত্তা সঠিক আছে কি না তা যাচাই করছে পুলিশ। এসময় ভবনগুলোর সিঁড়িপথে গ্যাস সিলিন্ডারসহ অন্যান্য প্রতিবন্ধকতাও খতিয়ে দেখেন তারা। অভিযানের সময় একটি ভবনে অনিয়ম পাওয়ায় ভবন মালিককে সতর্ক করে পুলিশ। পুলিশের এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানান অভিযানে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর।
পুলিশের মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন থানার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযান অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে নিয়ম মেনে হোটেল-রেস্তোরাঁ চালানো হচ্ছে কিনা সেই বিষয় অভিযানে গুরুত্ব পাচ্ছে। তবে আগে সেভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয়নি। এ কারণে মাঠপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছেন।