আতঙ্ক, ভয়ভীতির মধ্যেই মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের গোলায় এবার প্রাণহানিও দেখল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের মানুষ। গতকাল সোমবার দুপুরের দিকে ঘুমধুমের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জলপাইতলী গ্রামে ওপার থেকে আসা গোলার আঘাতে নিহত হয়েছেন বাংলাদেশি নারীসহ দু’জন। এতে আহত হয়েছে এক শিশু।
প্রতিবাদপত্র ও মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলবের বিষয়ে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (আজ) তাঁকে তলব করা হবে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির লড়াই চলছে। গতকালও থেমে থেমে সীমান্তের ওপার থেকে তীব্র গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। সব মিলিয়ে রাখাইনের দুই পক্ষের সংঘাত বাংলাদেশ সীমান্তে উৎকণ্ঠা বাড়াচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গত রোববার বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের প্রবেশ ও বাংলাদেশ অংশে রাখাইনের সংঘাতের কারণে বাংলাদেশি হতাহত হওয়ায় নেপিদোকে প্রতিবাদপত্র দিয়েছে ঢাকা। প্রতিবাদপত্রে কী কারণে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বাংলাদেশে ঢুকেছেন, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের সদস্যদের ফেরত নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। চিঠিতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে মিয়ানমার পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ রয়েছে। সোমবার সকালে মিয়ানমারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেশটিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের কথা হয়েছে। মিয়ানমার তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ফেরত নিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। এখন কোন প্রক্রিয়ায় ফেরত নেবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। তিনি বলেন, এর আগে ভারতেও মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অনেকে ঢুকে পড়েছিল। সেখান থেকে সেই সদস্যদের আকাশপথে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় জোরালো যুদ্ধ করছে আরাকান আর্মিসহ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী। তারা একত্রিত হয়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে সীমান্তের কাছে বেশ কয়েকটি শহরসহ রাখাইনের বড় এলাকা দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা।