মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা বাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় সেখানে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দুদিনের তুমুল লড়াইয়ের পর আতঙ্কগ্রস্ত সাধারণ রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে রাজ্য ছাড়ার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে কঠোর অবস্থানে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা যাতে নতুন করে অনুপ্রবেশ না করে, সে জন্য বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের অভ্যন্তরে সংঘর্ষের কারণে বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গত শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে টেকনাফের ২ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজিবি জানায়, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে অভ্যন্তরীণ সংঘাত চলমান থাকায় সীমান্তে কঠোর নিরাপত্তা বজায় রেখেছিল বাংলাদেশ। এবার সীমান্তের কাছাকাছি সংঘর্ষ চলছে বলে জানা গেছে এবং এ অবস্থায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে।
কমান্ডিং অফিসার মো. মহিউদ্দিন বলেন, \’যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আমরা ২৪ ঘণ্টা সতর্ক আছি।\’
এদিকে বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমারের দিক থেকে ভারী মর্টার ও গুলির শব্দে টেকনাফের হোয়াইকং ইউনিয়নের উলুবুনিয়া এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। সীমান্তবর্তী এলাকার হোয়াইকং ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সিরাজুল মোস্তফা জানান, মিয়ানমার থেকে আসা একটি গুলি তার এলাকার একটি বাড়িতে এসে পড়েছে।
গুলি ও গুলির শব্দ সম্পর্কে জানতে চাইল বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক বলেন, তিনিও ঘটনাটি শুনেছেন। কিন্তু ওই এলাকা তার এখতিয়ারের মধ্যে না। এ বিষয়ে তিনি ৩৪ বিজিবির অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইনের বুচিডং ও ফুমালি এলাকায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বুচিডং ও ফুমালি এলাকায় সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের মধ্যে তা ছড়িয়ে পড়ে। রাখাইন ও কক্সবাজারের স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকালও রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে এদিক-সেদিক যাওয়ার চেষ্টা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা যাতে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ না করে, সে জন্য বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
ওই সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, রাখাইনে চলমান সংঘাতের পরিপ্রেক্ষিতে রোহিঙ্গারা বিচ্ছিন্নভাবে দু-এক দিন ধরে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে। তবে সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার হওয়ায় মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম জনগোষ্ঠী পুনরায় আদিনিবাসে ফিরে গেছে।
রাখাইন ও কক্সবাজারের স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রোহিঙ্গারা প্রাণ বাঁচাতে এদিক-সেদিক যাওয়ার চেষ্টা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গারা যাতে নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ না করে, সে জন্য বিজিবি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি, সেটি আজকে হঠাৎ করে হয়নি। বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছে। আমাদের সীমান্তরক্ষীরা অনেক আগে থেকেই সেখানে সতর্ক রয়েছেন। রাখাইনে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’