জামালপুরের সরিষাবাড়ীর তারাকান্দিতে অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ যমুনা সার কারখানা (জেএফসিএল) গ্যাস-সংকটে ইউরিয়া উৎপাদন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেওয়ায় সোমবার বিকাল থেকে পুরোপুরি ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।
ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানির উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার স্বার্থে যমুনা সার কারখানার গ্যাসের চাপ কমানো হয়েছে। এতে গতকাল সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
একদিকে কারখানাকে ঘিরে প্রভাবশালী চক্রের টেন্ডারবাজি, সার কেলেঙ্কারি, পরিবহন চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্ম এবং অন্যদিকে বারবার গ্যাস সরবরাহ ও উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় শঙ্কিত শ্রমিক-কর্মচারীসহ কারখানার আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষ।
জেএফসিএল সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কেপিআই-১ মানসম্পন্ন যমুনা সার কারখানা প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে দৈনিক একহাজার ৭০০ মে. টন ইউরিয়া উৎপাদন করে আসছিল। কয়েক বছর ধরে গ্যাসের চাপ স্বল্পতা ও মেশিনারিজ ত্রুটির জন্য উৎপাদন কমে একহাজার থেকে এক হাজার ২০০ মে. টন পর্যন্ত উৎপাদন হচ্ছিল। এরইমধ্যে প্রতিবছরই দুই-একবার কর্তৃপক্ষ এ কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখে। এই অজুহাতে ২০২২ সালের ২১ জুন থেকে ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ টানা ছয়মাস যমুনায় সার উৎপাদন বন্ধ থাকে। এরপর আরও কয়েকবার স্বল্প সময়ের জন্য বন্ধ হয় কারখানাটি। ফলে বারবার চরমভাবে ব্যাহত হতে থাকে সার উৎপাদন।
সর্বশেষ গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর কয়েকদিনের জন্য গ্যাস সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করা হয়। সেসময় ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে সার উৎপাদন নিরবচ্ছিন্ন রাখার স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নেয় বিসিআইসি। এবারও ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন যমুনা সারকারখানার ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি মুঠোফোনে বলেন, গ্যাসের চাপ কম থাকার কথা জানায় বিসিআইসি। এরপর সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কারখানায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবে কবে নাগাদ গ্যাস সংযোগ ও উৎপাদন চালু হবে তা বলতে পারেননি তিনি।
কারখানা সূত্র জানায়, যমুনা সার কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য দৈনিক সর্বনিম্ন ৪২-৪৩ পিএসআই চাপের গ্যাস প্রয়োজন। এ চাপ ৯ পিএসআইয়ে নেমে এলে উৎপাদন সম্ভব হয় না। কারখানার শুরু থেকেই গ্যাস সরবরাহ করে আসছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।
এদিকে বারবার উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় অসন্তোষ বিরাজ করছে শ্রমিক নেতা ও স্থানীয় সচেতনমহলে।
এ ব্যাপারে জেএফসিএল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, সংঘবদ্ধ একটি প্রভাবশালী চক্র টেন্ডারবাজি, সার কেলেঙ্কারি, পরিবহন চাঁদাবাজি ও ট্রাক মালিক সমিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কারখানায় প্রতিনিয়তই অন্যায়-অপকর্ম করে আসছে। অন্যদিকে বারবার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারীসহ কারখানার আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষ শঙ্কিত। যমুনা সার কারখানার সার গুণগত মান অন্যান্য যেকোনো কারখানার চেয়ে ভালো। এ কারখানা বৃহত্তর ময়মনসিংহসহ উত্তরাঞ্জলের ২০টি জেলায় সারের চাহিদা পূরণ করে আসছে। দ্রুত এখানে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত ও উৎপাদন চালুর দাবি জানান তিনি।