বরিশালে নিতম্বে ঢুকে যাওয়া সুই বের করতে গিয়ে শিশুর মৃত্যু

সংগৃহীত

বরিশাল শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে, একটি ছয় মাস বয়সী শিশু অপারেশন টেবিলে মারা যায় যখন ডাক্তাররা তার নিতম্বে আটকে যাওয়া একটি সেলাইয়ের সুই অপসারণের কাজ করছিলেন।

গতকাল (পহেলা আগস্ট) বিকালে নগরীর বান্দ রোডের রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে ।

মৃত শিশু তানজিম পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার ডাউকা গ্রামের ফিরোজ খানের ছেলে।

নিহত শিশুর মামা রাকিব জানায়, তানজিমের নিতম্বে একটি ছোট সুচ লেগেছে। তার গলার এক্স-রে করে পরিস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার পর তিনি পটুয়াখালী আসেন। এ সময় চিকিৎসক বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জন তৌহিদুল ইসলামের কাছে গিয়ে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন।

রাকিব জানায়, গত সোমবার গলাচিপা থেকে তারা প্রথমবারের মতো বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) আসেন। ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হওয়ার আশঙ্কায় চিকিৎসক তৌহিদুল ইসলামের পরামর্শে তাদের শহরের আগরপুর রোডের মিডটাউন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ডাঃ তৌহিদুল ইসলামের মতে মিডটাউনে অস্ত্রোপচারের ভালো ব্যবস্থা নেই। রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে সেখানে পাঠিয়েছেন। তৌহিদুল ইসলামের পরামর্শে অস্ত্রোপচারের জন্য গতকাল সকালে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রাহাত আনোয়ার হাসপাতালে ।

রাকিবের মতে, অপারেটিং রুমে নিয়ে যাওয়ার আগে ভাগ্নে খেলা করেছে। বরিশালে বেশ কয়েকবার এক্স-রে করার পর সুই সেখানে ছিল বলে প্রমাণিত হলে চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন।

শিশুটির মামা অভিযোগ করে বলেন, “আমি ভিতরে ছিলাম”। তানজিমের অস্ত্রোপচার করা হয় যাতে তার শরীরে ৭-৮টি সুই ছিদ্র করা হয়। এরপর কোমরে ইনজেকশন দেওয়া হয়। এর পর তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।

রাকিব দাবি করেন, ডাক্তার তৌহিদুল ইসলাম অস্ত্রোপচার করেন বলে যন্ত্রপাতি বুঝিয়ে দেন।অজ্ঞান শিশুকে কোনো অক্সিজেন দেননি। কাটা স্থান সেলাই করেননি। তাদের বারবার অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারা কয়েকজন ওটি রুমে হাসিঠাট্টায় ব্যস্ত ছিলেন। পরে নিচে আমার পরিচিত ফার্মেসির একজনকে নিয়ে ফিরে এলে তাকে আর প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। কিছুক্ষণ পরেই আমি ভেতরে বোনের চিৎকার শুনতে পাই। ওরা আমার ভাগ্নেকে মেরে ফেলেছে।

অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুল করিম ঘটনাস্থলে আসার ঘোষণা দিয়ে বলেন, ৯৯৯-এ খবর পেয়ে আমরা ছুটে এসেছি। মৃত শিশু তানজিমের অপারেশন হয়েছিল। বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

ডাঃ তৌহিদুল ইসলাম শিশুটির অস্ত্রোপচার করেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। তাকে অজ্ঞান করেছে ড. ইসলাম মনিরুল।

শিশুটির এনেসথেসিয়া প্রদানকারী ডাঃ মনিরুল ইসলাম পরিস্থিতিটিকে অপ্রত্যাশিত এবং হৃদয়বিদারক বলে বর্ণনা করেছেন। মাত্র ছয় মাস বয়সী একটি শিশুর অজ্ঞান হওয়া উচিত নয়। যাইহোক, শিশুর অবিলম্বে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। তাই ঝুঁকি মেনে নিতে হয়েছে। এ জন্য আমার ১৬ বছরের চিকিৎসা পেশায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু অস্ত্রোপচারের শেষ মুহুর্তে এসে শিশুর হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। আমরা হৃদস্পন্দন ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। কিন্তু পারিনি। এখানে আমাদের চেষ্টার কোনো ঘাটতি ছিল না।

ডা. তৌহিদুল বলেন, অপারেশন সফল হয়েছিল। এনেস্থেশিয়া ব্যবহারের প্রবলেম হয়েছে।