মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মিল রেখে চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে ঈদ উদযাপিত

মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মিল রেখে চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে ঈদ উদযাপিত
চাঁদপুরের ৪০ গ্রামে ঈদ উদযাপিত - সংগৃহীত ছবি

চাঁদপুরের বিভিন্ন স্থানে আজ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে ঈদুল আজহা উদযাপিত হচ্ছে। হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্র দরবার শরীফের ঈদগাহ ময়দানে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের জামাতের ইমামতি করেন পীর আল্লামা জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী। নামাজ শেষে তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেন।

চাঁদপুরের ৪০টি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে ও মধ্যপ্রাচ্যের সাথে মিল রেখে উদযাপন করল ঈদুল আজহা। তবে সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের কিছুটা দুর্ভোগে পড়তে হয়। নামাজ শেষে একে অপরের সাথে কোলাকুলি করেন এবং মেতে ওঠেন আনন্দ উৎসবে। পরে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করেন।

৯৫ বছর আগে ১৯২৮ সালে সাদ্রা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইছহাক চৌধুরী বাংলাদেশে রোজাসহ ধর্মীয় ইবাদত পালনের প্রচলন চালু করেন। এর পর থেকে তার অনুসারীরা চাঁদপুরের বিভিন্ন এলাকায় এ রীতি পালন করেন। বর্তমানে জেলার হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, শাহরাস্তি ও মতলব উপজেলার ৪০টি গ্রামে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। মূলত পীরের অনুসারী হওয়ায় প্রথা অনুসরণ করছেন মুসল্লিরা।

সাদ্রা দরবার শরীফের পীর আল্লামা জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী বলেন, কোনো দেশের সাথে মিল রেখে নয় শুধুমাত্র পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে চাঁদ দেখার ওপর ভিত্তি করে ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইসহাক চৌধুরী (রহ.) ১৯২৬ সালে যখন কলকাতা আলীয়ায় পড়াশোনা করতেন তখন তিনি বিষয়টি উদঘাটন করেন। কোরআন সুন্নাহর আলোকে শরীয়তের বিধান হচ্ছে সারা পৃথিবীর জন্য একটি চাঁদ। সেই চাঁদ দিয়ে দিন তারিখ নির্ধারণ হবে। সেই চাঁদের ভিত্তিতে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করবে মুসলমানরা। হাদিসে কোনো দেশের কথা উল্লেখ নেই। হাদিসে বলা হয়েছে, চাঁদ দেখা গেলে ঈদ করো চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখ। কথাটি কারো জন্য কোনো নির্দিষ্ট করেননি বা কোনো দেশের জন্য নির্দিষ্ট করেননি।

তিনি বলেন, ৪টি মাজহাবের মধ্যে হানাফি, মালেকি ও হাম্বলি মাজহাব একমত যে সারা পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা যায় তখন তার অনুসরণ করা মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়। শুধুমাত্র শাফি মাজহাবের একটি অংশ দ্বিমত পোষণ করছেন। অপর একটি অংশ একমত রয়েছে। তাই বলা যায় এখানে ব্যতিক্রম করার জন্য মাজহাবি কারো সুযোগ নেই। যদি মাজহাব ছাড়া কেউ থাকেন এবং তারা যদি বিষয়টি চিন্তা করেন তাহলে তাদের অবশ্যই আমাদের সাথে একমতে আসতে হবে। যেহেতু কোরআন এবং হাদিসে রাসুলে পাকের নির্দেশ এভাবে দেওয়া আছে। ইতিমধ্যে শুধু চাঁদপুরে নয় আশপাশের বিভিন্ন জেলায় মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা এই প্রথা অনুসরণ করছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু জায়গা ছাড়া সারা পৃথিবীতে আজ ঈদুল আজহা উদযাপন করা হচ্ছে। আর পৃথিবীর সকল মুসলিম কোরআন হাদিস ও ইজমা ক্লাসের ভিত্তিতে এই ঈদ উদযাপন করেছে। এমনকি শাফি মাজহাবের অনুসারী ইন্দোনেশিয়ার একটি অংশ আজকে ঈদ উদযাপন করেছে। তাই বলব আমরা কোনো দেশের অনুসরণ নয় শরীয়তের বিধান অনুযায়ী আজ ঈদ উদযাপন করেছি।

জেলার ঈদ উদযাপন করা গ্রামগুলো হলো হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলিপুর, বলাখাল, মনিহার, জাকনী, প্রতাপপুর, বাসারা; ফরিদগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীপুর, কামতা, গল্লাক, ভুলাচোঁ, সোনাচোঁ, উভারামপুর, উটতলি, মুন্সিরহাট, কাইতাড়া, মূলপাড়া, বদরপুর, আইটপাড়া, সুরঙ্গচাইল, বালিথুবা, পাইকপাড়া, নূরপুর, সাচনমেঘ, শোল্লা, হাঁসা, গোবিন্দপুর।