উত্তর দিক থেকে আসা হিমালয়ের হিমেল হাওয়া আর ঘন কুয়াশার কারণে গেল কয়েকদিন ধরে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে পঞ্চগড়ে বেড়েছে জনদুর্ভোগ।
আজ সোমবার (৯ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়ায় ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে সকাল ৬টায় জেলায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেতুঁলিয়ায় ৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গতকাল রবিবার সন্ধ্যা থেকে কুয়াশার পরিমাণ কম থাকলেও রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘন কুয়াশায় পথঘাট ঢেকে যায়। সেই সঙ্গে হিমেল হাওয়া বয়ে যায়। রাতভর বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরে। সকালে হিমেল হাওয়া কিছুটা কম থাকলেও ঘন কুয়াশার কারণে পথঘাট ঢেকে যায়। দিনের বেলা মহাসড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহনগুলো।
ঘন কুয়াশার কারণে মরিচ, ভূট্টা, বোরো ধানের বীজতলাসহ নানা ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা। এদিকে ডায়রিয়া, জ্বর সর্দি, নিউমোনিয়াসহ শীত জনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বয়স্ক ও শিশুরা। প্রতিনিয়তই জেলার হাসপাতালগুলোতে সেবা নিতে ভিড় করছেন রোগীরা। অনেকে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে আবার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
জেলার সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের চাষি রবীন্দ্রনাথ রায় বলেন, তীব্র শীতে আমার আলু খেতের গাছ মরে যেতে শুরু করেছে। সপ্তাহে দুইদিন কীটনাশক স্প্রে করেও কাজ হচ্ছে না। খুবই দুঃচিন্তায় আছি। কী যে করি।
এদিকে জেলায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীতার্তদের জন্য প্রায় ৪২ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জানুয়ারির শুরু থেকে জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডা আপাতত দু-একদিন না থাকলেও ঘন কুয়াশা থাকবে। সেই সঙ্গে চলতি মাসের মাঝের দিক ও শেষের দিকে দুইটি মৃদৃ থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ চলতে পারে।
ঠান্ডায় কাঁপছে উত্তরের আরেক জেলা কুড়িগ্রাম। টানা দুই দিন থেকে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সোমবার সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। কনকনে ঠান্ডায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষজন। রেহাই পাচ্ছে না পশুপাখিরাও। গরম কাপড়ের অভাবে তীব্র শীত কষ্টে ভুগছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করেই কাজে বের হতে হচ্ছে শ্রমজীবীদের। তাপমাত্রা নিম্নগামী হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তাসহ ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকার চরাঞ্চলের মানুষজন।
শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ শীত জনিত নানা রোগ। আক্রান্তদের বেশির ভাগই শিশু। কুড়িগ্রাম ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের শিশু ও ডায়রিয়া ওয়ার্ডে নির্দিষ্ট বেডের বিপরীতে দ্বিগুণেরও বেশি রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। বহির্বিভাগেও বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তুহিন মিয়া জানান, সোমবার সকাল ৯টায় কুড়িগ্রাম জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা দুইদিন থেকে এ জেলা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। তিনি আরও জানান, এ মৃদু শৈত্যপ্রবাহ রংপুর অঞ্চলে আরও কয়েকদিন থাকবে।