মৌসুমের শুরুতেই লাউ চাষে লাখপতি!

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের চাষি শামসুল হক নিজের জমি না থাকায় সারাবছর অন্যের জমিতে বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। মাত্র ৪০ হাজার টাকা খরচে তিনি এই শীত মৌসুমের শুরুতেই লাউ বিক্রি করে আয় করেছেন প্রায় দেড় লাখ টাকা। মৌসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি কমপক্ষে তিন লাখ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন।

পাঁচ সদস্যের পরিবারে চাষি শামসুল হকই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ৫০ শতক জমি বর্গা নিয়ে একের পর এক বিভিন্ন মৌসুমী শাক-সবজি বিক্রিতে স্ত্রী শামসুন্নাহারও তাকে সাহায্য করেন। প্রতিটি লাউ আকারভেদে ৭০ থেকে ৯০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন।

চাষি শামসুল হক জানান, লাউ চাষের প্রক্রিয়া জানতে তাকে কারও কাছে যেতে হয়নি। ত্রিশ বছর আগে একবার লাউ চাষ করেছিলেন। একদিকে করোনা, অন্যদিকে মেয়ের বিয়ে দেওয়া, ছেলের লেখা-পড়ার খরচ চালানো ইত্যাদি কারণে গেল দু’বছর আর্থিক অস্বচ্ছলতা ছিল। ফলে শাক-সবজির আবাদ করতে পারেননি। এবারের লাউ ফলনে নিজ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরিবারের আর্থিক দৈন্যতা পুষিয়ে অধিক মুনাফা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

প্রতিবেশী চাষি শহীদুল্লাহ বলেন, অন্যান্য শাকসবজির পাশাপাশি এবারও তিনি লাউয়ের চাষ করেছেন। গেল দু’বছর করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। লাউ চাষ করে বিক্রি করতে পারেননি। ওই দু’বছর তার উৎপাদন খরচও উঠেনি। এবার বেশ ভালো ফলন ও আয় করছেন।

প্রতিবেশী জসীম উদ্দিন বলেন, সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিন তিনি লাউ বিক্রি করেন। এ এলাকার টেংরা, তেলিহাটি, টেপিরবাড়ী (ছাতির বাজার) এবং আনসার টেপিরবাড়ী হাটে চাষি শামসুল হক নিয়মিত লাউ বিক্রি করেন। সময় পেলেই তিনি লাউ ক্ষেতে কাজ করেন। এবারের লাউ ফলনে তার অনেক লাভ হচ্ছে। তার চাষাবাদ দেখে আশপাশের চাষিরাও তার কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।

স্ত্রী শামসুন্নাহার বলেন, উৎপাদন খরচের চেয়ে কাজের লোকের মজুরি বেশি। কাজের লোক নিতে গেলে অনেক টাকা লাগে। তাই কাজের লোক না নিয়ে নিজেরাই জমিতে কাজ করে শ্রমিকের টাকায় ছেলের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। বীজ বপনের ৪৫ দিনের মাথায় ফলন পেয়েছেন। স্থানীয় বাজারগুলোতে লাউ বিক্রি করে বেশ ভালো আয় পেয়ে পরিবারের সবাই খুশি।

চাষি আব্দুল বাতেন বলেন, শামসুল ভাইয়ের চাষাবাদ দেখে এবার লাউয়ের আবাদ করেছেন। তিনিও ফলন পেতে শুরু করেছেন। প্রত্যাশার চেয়েও বেশি লাভবান হওয়ার আশা করছেন তিনি।

স্থানীয় তেলিহাটী ইউনিয়ন পরিষদের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য আইনুল হক বলেন, শামসুল হক একজন সফল চাষি। বিভিন্ন মৌসুমী ফসলের চাষ করে তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। লাউ চাষে তিনি সবচেয়ে বেশি সফল। তার লাউ চাষ দেখে একই এলাকার আব্দুল বাতেন, নূরুল হক, ফজলুল হকসহ অনেকেই লাভবান হচ্ছেন।

Scroll to Top