অবশেষে নেওয়া হয়েছে রোগীর ব্যবস্থাপত্র ছিনিয়ে ছবি তোলার প্রতিযোগিতা বন্ধের সিদ্ধান্ত। জেলা প্রশাসনের জেল-জরিমানা অভিযানের পরপরই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পটুয়াখালী ফার্মাসিউটিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাসোসিয়েশন (ফারিয়া)। রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুললেই ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
এর আগে ওষুধ কোম্পানির ১১ প্রতিনিধিকে জেল-জরিমানার ঘটনায় কয়েক দফা আন্দোলন করে (ফারিয়া)। এদিকে জেল-জরিমানার ঘটনায় ফারিয়া পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালককে জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দিলে তাদের বিপক্ষে অবস্থান নেয় বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।
ডাক্তারদের এই সংগঠনটি জরুরি সভা ডেকে ফারিয়ার সঙ্গে সব ধরনের সাক্ষাৎ বন্ধ ঘোষণা করেছেন। তবে ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিরা ওষুধ সরবরাহ বন্ধ ঘোষণা প্রত্যাহার করেছে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) পটুয়াখালীর সভাপতি ডা. মিজানুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডাক্তার শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে জরুরি সভা হয়েছে।
গতকাল ১২ নভেম্বর বিএমএর ওই সভায় নেতারা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে ঢুকে রোগীকে দেওয়া ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলেন। যে কারণে রোগীরা প্রতিনিয়ত হয়রানি ও হেনস্তা হচ্ছেন। এ ঘটনায় ফারিয়াকে লিখিতভাবে সর্তক করা হলেও তারা তা মানেনি।
রোগীকে দেওয়া ব্যবস্থাপত্রের ছবি না তোলার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনা তদারকিতে ৩ সদস্যের কমিটিও করেছে সংগঠনটি।
এদিকে পটুয়াখালী ফার্মাসিউটিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে (ফারিয়া) নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলার সিদ্ধান্ত বন্ধ ঘোষণা করেছে। একই সভায় তারা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির পক্ষ থেকে সার্ভে বন্ধ ঘোষণা চেয়েছেন। কোনো প্রতিনিধি যদি গোপনে ছবি তোলেন তাকে ১০ হাজার টাকার আর্থিক দণ্ড দেওয়ার ঘোষণা দেয় ফারিয়া।
এ প্রসঙ্গে ফারিয়ার সভাপতি রকিবুল হাসান বলেন, ফারিয়ার কোনো ব্যক্তি হাসপাতালে গিয়ে ডাক্তারদের ভিজিট করবে না। মানবিক কারণে ওষুধ সরবরাহ বন্ধ ঘোষণা প্রত্যাহার করেছেন তারা।
এছাড়া কোনো প্রতিনিধি যদি ব্যবস্থাপত্রের গোপনে ছবি তোলেন তাকে ১০ হাজার টাকার আর্থিক দণ্ড দেওয়ার কথাও জানান তিনি। ফারিয়ার ফেসবুক পেজে দেওয়া এমন একটি ঘোষণা ভাইরাল হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৮ নভেম্বর পটুয়াখালীতে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসের বহির্বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে অবস্থানরত ওষুধ কোম্পানির ১১ প্রতিনিধিকে আটক করে ৯ জনকে ৭ দিনের জেল ও ২ জনকে অর্থদণ্ড দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল কাইয়ুম। এ ঘটনার পরপর সহকর্মীদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম করে পটুয়াখালী ফার্মাসিউটিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাসোসিয়েশন (ফারিয়া)। এমনকি দণ্ডিত ব্যক্তিরা জেল থেকে মুক্তি পেয়ে শহরে মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালককে জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ স্লোগান ও বক্তব্য দেয়।
এ ঘটনায় সংক্ষুব্ধ ও অপমানিত হয়ে বিএমএর নেতারা ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছেন। পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা ওষুধ কোম্পানির কোনো প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। এ সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করলে ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধির সঙ্গে ডাক্তারদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিএমএ।