ময়মনসিংহের ত্রিশালে ট্রাকে পিষ্ট মায়ের পেট ফেটে ভূমিষ্ঠ শিশুটির নাম রাখা হয় ফাতেমা। তাকে বর্তমানে নতুন ঠিকানা ছোটমণি নিবাসে দেওয়া হয়েছে। শিশুটিকে লালন-পালনের সক্ষমতা পরিবারের নেই— তাই প্রশাসন তাকে গতকাল শুক্রবার ছোটমণি নিবাসে পাঠায়।
নতুন অতিথির আগমনে ঘরে আনন্দ থাকার কথা ছিল। কিন্তু ট্রাক কেড়ে নিয়েছে সব আনন্দ, দিয়ে গেছে ঘোর অন্ধকার। অথচ সড়কে জন্ম নেওয়ার পর হাসপাতাল থেকেই নতুন ঠিকানায় ঠাঁই হয়েছে নবজাতক শিশুটির।
গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে মাইক্রোবাসে করে শিশুটিকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেওয়া হয়। ময়মনসিংহ সরকারি বালিকা এতিমখানার কর্মচারী তাহমিনা আক্তার স্বপ্না শিশুটিকে কোলে নিয়ে যান রাজধানীর ছোটমণি নিবাস পর্যন্ত। শিশুটির সুন্দর ভাবে নতুন ঠিকানায় পৌঁছে দিতে সঙ্গী হন ত্রিশাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান, শিশুটির দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, সমাজকর্মী আবদুল্লাহ সুমন ছাড়াও পুলিশের একটি দল। ছোট বোনকে রেখে আসতে সঙ্গে যায় ৯ বছরের বড় বোন জান্নাতুল ফেরদৌসও।
দুপুর আড়াইটায় শিশুটি নিয়ে তারা ছোটমণি নিবাসে পৌঁছান। পরে আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঢাকার আজিমপুর ছোটমণি নিবাসের উপ-তত্ত্বাবধায়ক জুবলী বেগম রানুর কাছে হস্তান্তর করা হয় ফাতেমাকে। নতুন বিছানায় নতুন ঠিকানায় ঠাঁই হয় ফাতেমার।
এর আগে শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. ওয়ায়েজ উদ্দিন ফরাজীর কক্ষে শিশুটিকে হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিশুটিকে ছাড়পত্র দিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করে কর্তৃপক্ষ।
নবজাতক শিশুটির দাদার উপস্থিতিতে হস্তান্তরপত্রে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের পক্ষে সই করেন ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের নবজাতক ইউনিটের ইনচার্জ (নার্স) শান্তি লতা এবং আর সমাজসেবা অধিদপ্তরের পক্ষে সই করেন ত্রিশাল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান।
১৬ জুলাই জেলার ত্রিশাল উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ট্রাকচাপায় মঠবাড়ি ইউনিয়নের রায়মনি গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম, রত্না বেগম ও ছয় বছর বয়সি সানজিদা আক্তার নামে তিন জনের মৃত্যু হয়। ওই দুর্ঘটনায় মাটের পেট ফেটে ভূমিষ্ট হয় নবজাতক শিশুটি।
ফাতেমাকে হস্তান্তরের সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন দাদা মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, বাড়িতে নানা সমস্যা থাকায় শিশুটিকে ছোটমণি নিবাসে দিতে রাজি হয়েছি। বছর খানেকের মধ্যে নতুন ঘর করে ফাতেমাকে বাড়িতে নিয়ে যাব। জান্নাত ও ইবাদত তাকে ছাড়া থাকতে পারবে না।