সিলেট শহরের ২০টি এলাকাসহ পাঁচটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক লাখ মানুষ হয়ে পড়েছে পানিবন্দী। বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। একইসঙ্গে সারা দেশের সাথে সুনামগঞ্জের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সুরমা নদীর পানি ছাতকে প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ২শ’ ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে। জেলা শহরের অর্ধেকের বেশি এলাকা পানিতে ডুবে আছে। পুরোপুরি ডুবে আছে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা। ডুবে গেছে বেশ কিছু বিদ্যুৎ স্টেশন। বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেটসহ সবধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
সিলেটের কুমারগাঁও গ্রিড উপকেন্দ্রের সুইচইয়ার্ড প্লাবিত হওয়ায় সিলেট অঞ্চল বিদ্যুৎ বন্ধের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া, ছাতক ও সুনামগঞ্জ গ্রিড উপকেন্দ্র পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হওয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়েছে। সাময়িক এ অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সিলেট অঞ্চলের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ করেছেন প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ের কাছাকাছি পানি চলে আসায় গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে তিন দিনের জন্য বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
পানিতে ডুবে গেছে কোম্পানীগঞ্জ, লামাকাজী, বিশ্বনাথ, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, ওসমানীনগরসহ সবক’টি এলাকা। বাসাবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে এসব অঞ্চলের মানুষের বাড়িতে এখন গলা সমান পানি। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে মানুষ।
জানা গেছে কারও বাড়িতে হাঁটুপানি, কারও বাড়িতে কোমরসমান আবার কারও বাড়িতে গলাসমান পানি। মাচা বানিয়ে কিংবা ঘড়ের চালে অনেককে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
কেউ কেউ নৌকায় করে বা সাঁতরে আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা কোন উঁচু জায়গায় ঠাঁই নিলেও পানিতে চুলা তলিয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ ঘরেই বন্ধ রান্নাবান্না। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটের ফলে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন বানভাসি মানুষ। তাই খাবার ও বিশুদ্ধ পানি চেয়ে সাহায্যের আবেদন জানাচ্ছেন অনেকে।
বন্যাকবলিতদের উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার জন্য সিলেট ও সুনামগঞ্জে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, হু হু করে বাড়ছে বন্যার পানি। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। সিলেটের অধিকাংশ সড়ক-মহাসড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
বন্যার পানিতে শ্রেণিকক্ষ তলিয়ে যাওয়ায় সিলেটে ২৯০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৩০টি প্রাথমিক ও ৬০টি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান। যে যেখানে আছে সেখানেই আটকা পড়েছে। অনেক পর্যটকও আটকা পড়েছেন সিলেটের বিভিন্ন এলাকায়।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, খাদ্যসংকট দূর করতে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দুর্ভোগ মোকাবিলায় প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছে। বন্যার পানিতে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে সেনাবাহিনী কাজ করছে। বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে কিংবা অন্য নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে।