সিয়াম সাধনার এই মাসে সংযম পালনে ভুলবশত কিছু বাড়াবাড়ির শিকার হই আমরা। বিভিন্ন বিধান পালনের ক্ষেত্রে কী করা যাবে, আর কী করা যাবে না, বা করা গেলেও তার সীমা কতটুকু তা অনেকেই জানি না। ফলে বহু মানুষ অযথা কষ্ট ভোগ করে।
আমাদের সমাজে রোজা নিয়ে বহুল চর্চিত এরকম একটি প্রশ্ন হচ্ছে, রোজা রেখে কাউকে রক্তদান করলে রোজা নষ্ট হবে কি না।
শরীয়ত নির্ধারিত রাস্তাগুলো দিয়ে কোনো কিছু মস্তিষ্ক ও উদরে প্রবেশ করলেই শুধু রোজা ভাঙ্গবে। রক্তদানের কারণে যেহেতু কোনও বস্তু দেহের ভেতরে ঢোকে না, তাই তাতে রোজা নষ্ট হওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাই শরীয়ত মোতাবেক শরীর থেকে রক্ত বের হয়ে যাওয়া রোজা ভঙ্গের কারণ নয়।
অতএব, দুর্ঘটনা বশত: রক্ত বের হওয়া, অন্যকে রক্ত দেওয়া রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। অবশ্য মুখ ভরে বমি হওয়া কিংবা অল্প অল্প বমি মুখ ভরে হওয়ার সমান সাব্যস্ত হওয়া রোজা ভঙ্গের কারণ। রক্ত বমির ক্ষেত্রেও একই মাসআলা।
আবার রোজা রেখে নিজে রক্ত নিলে যেহেতু এ রক্ত শরীরের উল্লেখযোগ্য চার নালির কোনো নালি দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে না, বরং শরীরের অন্যান্য ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে প্রবেশ করে; সুতরাং রোজাবস্থায় নিজে রক্ত গ্রহণ করলেও রোজা নষ্ট হবে না।
তবে, রক্তদানে শরীর দুর্বল হয়ে রোজা ভঙ্গের আশঙ্কা থাকলে, তা মাকরূহ বলে বিবেচিত। হযরত সাবিত আল বানানী থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, ‘হযরত আনাস বিন মালেক (রা)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, রোজাদারের জন্যে সিঙ্গা লাগিয়ে শরীর থেকে রক্ত বের করাকে আপনি কি অপছন্দ করেন? জবাবে তিনি বলেন, না আমি অপছন্দ করি না। তবে দুর্বল হয়ে পড়ার ভয় থাকলে ভিন্ন কথা।’ (সহীহ আল বোখারী ১:২৬০)
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে রোজা রেখে সিঙ্গা লাগিয়েছেন। তা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
সিঙ্গার মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত রক্ত বের করা হয়। তাই রোজা রেখে নিজের টেস্ট বা পরীক্ষার জন্য কিংবা কোনো রোগীর চিকিৎসার প্রয়োজনে রক্ত দিলে রোজার কোন ক্ষতি হবে না। তবে রক্ত দিতে গিয়ে দুর্বল হয়ে রোজা ভেঙ্গে ফেলার আশঙ্কা থাকলে, সে অবস্থায় রক্ত দেওয়া মাকরুহ হবে।
(সহীহ আল বোখারী, হাদিস নং-১৯৩৮, মুসলিম শরিফ, হাদিস নং-১১০৬, আবু দাউদ শরিফ, হাদিস নং-২৩৭২)