শরীরের অতি পরিচিত উপসর্গ কাশি। মূলত শ্বাসতন্ত্রীয় রোগের উপসর্গ এটি। খুবই বিরক্তিকর ও কষ্টদায়ক একটি স্বাস্থ্য সমস্যা কাশি। অনেকসময় কাশির তীব্রতায় বিশ্রাম নেয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষত রাতে। কিন্তু কেন রাতের বেলা কাশি বেড়ে যায়?
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সহজ কিছু পদক্ষেপ মেনে চললে কাশির প্রকোপ কমে যায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কুসুম পানি পান করা, তরল খাবার গ্রহণ করা, প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবন করা, বিশ্রাম নেয়া ইত্যাদি। কিন্তু অনেকসময় এসব কাজ করেও কাশি থেকে রেহাই মেলে না।
শরীরকে যেকোনো সংক্রমণের বিরুদ্ধে ভালোভাবে লড়াই করার সুযোগ দিতে বিশ্রাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর সবচেয়ে ভালো বিশ্রাম হচ্ছে ঘুম। কিন্তু সমস্যা হলো, বিশ্রামের জন্য বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই বেড়ে যায় কাশির প্রকোপ। অনেকসময় কাশি এতটাই বেড়ে যায় যে ঘুমানো কঠিন হয়ে পড়ে।
মাধ্যাকর্ষণ
রাতে কাশির মাত্রা বৃদ্ধির প্রথম কারণ মাধ্যাকর্ষণ (গ্রাভিটি)। জর্জিয়া ইনফেকশাস ডিজিজের ফিজিশিয়ান মিশেল ব্লাসের মতে, ‘আমরা যখন শুয়ে থাকি, তখন গলায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে শ্লেষ্মা জমতে থাকে। আর তার কারণেই কাশি হয়।’ এই সমস্যা এড়ানোর অন্যতম উপায় হলো, শরীরের ওপরের অংশ একটু উঁচুতে তুলে ঘুমানো। এতে গলায় শ্লেষ্মা জমতে পারবে না। এ কাজে ওয়েজ পিলো ব্যবহার করতে পারেন।
শুষ্ক বাতাস
নাক ও গলায় প্রতিক্রিয়া তৈরি করে শুষ্ক বাতাস। ফলে রাতে কাশির প্রকোপ বেড়ে যায়। রাতের বেলা কাশির তীব্রতা রোধে ঘরে হিউমিডিফাইয়ার ব্যবহার করতে পারেন। এটি ঘরের বাতাস আর্দ্র করবে। এতে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া সহজ হবে।
তবে হিউমিডিফাইয়ার ব্যবহারের সময় সচেতন হতে হবে। কেননা এতে যে পানি ব্যবহার করবেন তা যদি জীবাণুমুক্ত না হয় তবে বাতাসে জীবাণু ভেসে বেড়াবে। এটি অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়াবে।
রাতে কাশি কমাতে করণীয়
কাশির প্রকোপে রাতে ভালোমতো ঘুম হয় না। তাই ঘুমানোর আগে একটি কফ ড্রপ (থ্রোট লজেন্স) চুষতে থাকুন। হার্ড ক্যান্ডিও চুষতে পারেন। এতে গলা প্রশান্তি পাবে। কাশির মাত্রা কমবে।
প্রচুর পানি পান করতে হবে। বিশেষ করে, সন্ধ্যা থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত। খাদ্যতালিকায় বেশি করে তরল খাবার রাখুন। পানি ও তরল গলার শ্লেষ্মা পাতলা করে। এতে আরাম পাবেন।
কাশির প্রবণতা কমাতে উষ্ণ পানি বা চায়ের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খান। শুধু মধুও খেতে পারেন। তবে এক বছরের কম বয়সি শিশুকে মধু খাওয়ানো যাবে না।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঠান্ডা অথবা ফ্লু জনিত কাশি বেশিদিন থাকে না। ৪/৫ দিনের মধ্যেই এটি সেরে যায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু কাশি যদি এক সপ্তাহের বেশি সময় থাকে তবে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।
অনেকসময় অ্যালার্জি, গ্যাস্ট্রোইসোফ্যাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (জিইআরডি), অ্যাজমা, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) অথবা ক্রনিক সাইনুসাইটিস ইত্যাদির কারণে কাশি হতে পারে। ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস থেকেও কাশি হতে পারে। দীর্ঘসময় ধরে কাশিতে ভুগলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।