বিয়ের পরে রঙিন থাকে সময়। এক বা কয়েক বছর পর সংসারে আগমন ঘটে নতুন অতিথির। তখন তাকে ঘিরেই সব ব্যস্ততা। তার কান্না থামানো, খাওয়ানো, তাকে নিয়ে খেলাতেই সময় কেটে যায়। এর মাঝেই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটা যেন কিছুটা হারিয়ে যায়। সন্তানকে সময় দিতে গিয়ে দু’জনের একান্ত সময় কাটানোর আর সুযোগ মিলে না। সেই সঙ্গে শারীরিক এবং মানসিক ধকল তো আছেই। সব মিলিয়ে হারিয়ে যেতে বসে যৌনজীবন।
সন্তান জন্মের পর আগের মতো যৌনজীবনে ফিরে যাওয়া কি সম্ভব? ঠিক কতোদিন পরেই বা ফিরে যাওয়া উচিত আগের মতো সম্পর্কে? বিষয়টি নিয়ে নতুন মায়েদের এবং বাবাদের মনে আছে নানান প্রশ্ন।
এ প্রসঙ্গে দ্য সান পত্রিকা থেকে চার জন নারীর মতামত নেয়া হয়েছিল। জেনে নিন তাদের মতামত।
দক্ষিণ পূর্ব লন্ডনের বাসিন্দা ডেবি হগ একজন লেখিকা। চার সন্তানের মা তিনি। তার মতে, ‘গর্ভে সন্তান থাকুক কিংবা না থাকুক, স্বাচ্ছন্দ্যের মানুষটির সঙ্গে সবসময়েই শারীরিকভাবে মিলিত হওয়ার বিষয়টি উপভোগ করি আমি। এমনকি আমার প্রথম তিন সন্তান জন্মের ১৫ দিন পরই স্বামীর সঙ্গে স্বাভাবিক যৌন জীবন কাটিয়েছি।’
তবে তিনি জানান, ২০১২ সালে তার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর তিনি নিজের বয়সের চাইতে ১৫ বছরের ছোট একজনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। চতুর্থ সন্তানের জন্মের মাত্র দুই ঘণ্টা পরেই স্বামীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটিয়েছেন বলে জানান তিনি।
২৭ বছর বয়সী এমা অ্যাপলগেট বয়স্কদের সেবিকা হিসেবে কাজ করেন। তার সঙ্গী একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান। তাদের ১৩ মাস বয়সী একটি সন্তান আছে। এমা জানান, এক বছর ডেট করার পর তারা সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করেন এবং মাত্র দুই মাস পরই গর্ভধারণ করেন। গর্ভবতী অবস্থাতেও স্বামীর সঙ্গে তার যৌন জীবন স্বাভাবিক ছিল। তার ওজন অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এজন্য সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম হয়। তবে পুরো সময়টাতেই তার সঙ্গী অনেক রোমান্টিক ছিলেন বলে জানান তিনি এবং সন্তান জন্মের তিন সপ্তাহ পরেই তারা স্বাভাবিক যৌন জীবন ফিরে পেয়েছিলেন।
অ্যানজেলা ম্যাকগিন পেশায় একজন রাঁধুনি। তার স্বামী একজন নির্মাণ কর্মী। তাদের ১৮ মাস বয়সী সন্তান আছে একজন। অ্যানজেলা জানান, ৭ বছর চেষ্টা করে গর্ভধারণের পর ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। মর্নিং সিকনেসের কারণে প্রায় ৬ মাস দুর্বল ছিলেন। হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছে কয়েকবার। তবুও প্রথম ছয় মাস তাদের যৌনজীবন স্বাভাবিক ছিল। তবে সন্তানের নিরাপত্তার জন্য শেষ তিনমাস তারা বিরত ছিলেন। ইমার্জেন্সি সিজারিয়ানের মাধ্যমে সন্তান জন্ম হয় অ্যানজেলার। এরপর ভিটামিন কে-এর অভাবের কারণে চার মাস প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। তাই এই সময়টাতে স্বামীকে অন্তরঙ্গ সময় দিতে পারেননি তিনি। এছাড়াও ভীষণ বিষণ্ণতাতেও ভুগছিলেন। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক যৌনজীবনে ফিরে যেতে তার প্রায় ৮ মাস সময় লেগেছিল।
তিন সন্তানের মা সারা কলিনস এর বয়স ৪৮, স্বামীর ৫০। সারা জানান তাদের ২৪ বছরের সংসার। সন্তান জন্মের আগে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মিলিত হতেন তারা। তবে সন্তান জন্মের পরে তাদের দূরত্ব বেড়েছে। তিন সন্তানের জন্মের পরে এখন বছরে দুই বার স্বামীর সঙ্গে মিলনের সুযোগ হয় তার। ছোট সন্তানের জন্মের পরে তিনি শারীরিক এবং মানসিকভাবে এতটাই ভেঙ্গে পড়েন যে দুই বছর পর স্বাভাবিক যৌনজীবনে ফিরেছেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞান কী বলে
গাইনোকলোজিস্ট কারেন মর্টনের মতে, প্রত্যেক নারীর শরীর আলাদা। সন্তান জন্মের পরে শরীরের ধকল সয়ে নেয়ার ক্ষমতাও তাই আলাদা। স্তন্যপান করানোর সময়ে এস্ট্রোজেনের পরিমাণ কম থাকে। ফলে ন্যাচারাল লুব্রিক্যান্টের অভাব থাকে। এতে যৌন মিলনে সমস্যা হতে পারে। এক্ষেত্রে কৃত্রিম লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করা যেতে পারে বলে জানান তিনি।
এছাড়া, নতুন মায়েরা অনেকেই বিষণ্ণতায় ভোগেন। ক্লান্ত আর অস্থিরতা তো আছেই। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক যৌন জীবনে ফিরে যাওয়া কঠিন। তবে দুজনের পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং আবেগের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা সম্ভব। দ্য সান
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ০১ নভেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/সাদ