ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে অনেকেরই নানা ধরনের অসুখ হয়ে থাকে। গরমে ঘামের সাথে আমাদের শরীরের জল বেড়িয়ে যায় যা আমাদের শরীর দূর্বল করে দেয়। এছাড়াও ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিং সহ নানা রোগ দেখা দেয়। তাই এ সময় খাবার খেতে হবে সুষম ও পরিমিত। তাই এ সময়ে খাবারের দিকে নজর দেওয়া খুবই জরুরি। যেন খাবারের মাধ্যমে কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায় শরীরে। এই সময় খেতে হবে এমন কিছু খাবার, যা শরীর ঠাণ্ডা রাখবে, তার সঙ্গে জোগাবে পুষ্টি। তাই সবার গরমের সময় পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত।
চলুন জেনে নিই কোন খাবারগুলো গরমে আপনাকে সুস্থ রাখবে এবং আরাম দিবে আর কোনগুলো খাওয়া অনুচিত।
যে খাবারগুলো খাবেন
ডাবের জল:
ডাবের জল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে বিদ্যমান থাকে প্রাকৃতিক ইলেকট্রোলাইটস, যা শরীরে জলের মাত্রা ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং পাশাপাশি শরীর সতেজ করতেও সাহায্য করে। তাই গরমে স্বস্তি পেতে নিয়মিত ডাবের জল পান করতে পারেন।
শসা:
শসার মাল্টি ভিটামিনস ও মাল্টি মিনারেলস প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে কাজ করে এবং ভিটামিন ও মিনারেলসের অভাবজনিত সমস্যা থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও শসার পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। শসাতে পানি আছে শতকরা ৯৫ভাগ। এটি শরীরের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ করে। শরীর শীতল রাখতে সহায়তা করে। তাই শসা খাওয়ার অভ্যাস করতে পারেন।
দই:
গরমকালে খুবই উপকারী খাবার হচ্ছে, টক দই। দইয়ের পটাসিয়াম রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও দই খাবার সহজে হজম করতে সহায়তা করে। এতে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা শরীরকে স্বাচ্ছন্দ্যে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পুদিনা পাতা:
গরমকালে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখাতে পুদিনার রস খুব ভাল। স্নানের আগে জলের মধ্যে কিছু পুদিনা পাতা ফেলে রাখুন। সেই জল দিয়ে স্নান করলে শরীর ও মন চাঙ্গা থাকে। তাছাড়াও তাত্ক্ষণিক যে কোনও ব্যথা থেকে রেহাই পেতে পুদিনা পাতার রস খুব উপকারী। পুদিনা পাতার রস ত্বকের জন্যও উপকারী।
লেবু-জল:
তৃষ্ণা মেটাতে অন্য কোনো কোমল পানীয় না খেয়ে, লেবু-জল মেটাতে অন্য কোনো কোমল পানীয় না খেয়ে, লেবু-জল পান করুন। লেবু জলে থাকে প্রচুর মাত্রায় পটাশিয়াম, যা রক্তচাপকে স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। পাকা লেবুতে থাকে ইলেকট্রোলাইটস (যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি)। লেবু জল আপনাকে হাইড্রেট করে, শরীরে যোগান দেয় এইসব প্রয়োজনীয় উপাদানের যা দেহের জলশূন্যতা দূর করে। গরমের সময় শরীরকে সতেজ রাখতে এর কোনো জুড়ি নেই।
সবুজ শাকসবজি:
এই ধরনের খাবারে ফাইবার এবং জলের মাত্রা খুব বেশি পরিমাণে থাকে। তাই প্রত্যেকবার খাবারের সঙ্গে অল্প করে সবজি খেলে শরীরে জলের মাত্রা কমে যাওয়ার আশংকা কমে। সেই সঙ্গে শরীরও চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
তরমুজ:
গরমকালে তরমুজ সৃষ্টিকর্তার একটি আশীর্বাদ। তরমুজে প্রচুর পটাসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। তরমুজ পানীয় ফল। গরমের সময় মাত্রাতিরিক্ত ঘাম হওয়ায় শরীর থেকে জল বেরিয়ে যায়। ফলে ডিহাইড্রেশনের আশংকা বাড়ে। তরমুজ এই জলের ঘাটতি দূর করে এবং শরীর ঠান্ডা রাখে।
হালকা খাবার:
গরমকালে খাবার হজম হতে সমস্যা হয়। তাই এই সময় হালকা খাবার খাওয়াই ভালো। গরমের সময় যতটা সম্ভব ভারী এবং তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। দুপুরের খাবারে ভাতের সাথে শাকসবজি, ছোট মাছ, মুরগীর মাংস, এবং সালাদ খাওয়া যেতে পারে।
ফল:
গ্রীষ্মে আমাদের দেশ মৌসুমি ফলে ভরে যায়। আম, কাঠাল, লিচু, তরমুজ এর মতো রসালো ফলে বাজার সয়লাব হয়ে উঠে। প্রতিদিন সকাল, দুপুর আর রাতের খাবারের পাশাপাশি সারা দিনের নাস্তায় পর্যাপ্ত পরিমাণে মৌসুমী ফল রাখতে পারেন। এদের পুষ্টিগুণ গরমে আপনাকে স্বস্তি দেবে এবং শরীরের জল শূন্যতা দূর করে বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে।