নবজাতকদের জন্মগত থাইরয়েড রোগ এমন একটি অবস্থা, যেখানে থাইরয়েড গ্রন্থি জন্মগতভাবেই থাকে না বা পুরোপুরি বিকশিত হতে পারে না। এ জন্য থাইরয়েড হরমোন তৈরি হতে পারে না।
নবজাতকের থাইরয়েড কী?
নবজাতকের থাইরয়েড সমস্যা বলতে মূলত ‘কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম’ বা থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতিকেই বোঝানো হয়। যদিও অল্প কিছু ক্ষেত্রে নবজাতকের হাইপারথাইরয়েডিজমও হতে পারে, যাকে ‘নিওনাটাল থাইরোটক্সিকসিস’ বলা হয়।
থাইরয়েড হরমোন শরীরের থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত অতি প্রয়োজনীয় একটি উপাদান, যার অভাব হলে শিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হতে পারে। পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা করেও আর লাভ হয় না।
মাতৃগর্ভে থাকতেই শিশুর বেড়ে ওঠার জন্য এই হরমোন দরকার, তাই প্রত্যেক গর্ভবতী মায়ের থাইরয়েড সমস্যা আছে কি না, তা জানা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা করা আবশ্যক। কারণ, ‘কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়েডিজম’ সময়মতো শনাক্ত হলে চিকিৎসার মাধ্যমে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
নবজাতকের থাইরয়েড হরমোন ঘাটতির লক্ষণ:
♦ কোনো লক্ষণ না-ও থাকতে পারে, পরীক্ষা করলে ধরা পড়তে পারে
♦ বেশি ঘুমাচ্ছে, কম খাচ্ছে—এমন লক্ষণ থাকতে পারে
♦ অনেক দিন ধরে জন্ডিস থাকতে পারে
♦ পায়খানা কষা
♦ মাংসপেশিগুলো দুর্বল বা থলথলে
♦ গ্রোথ বা বৃদ্ধি কম হওয়া
আশার কথা, চিকিৎসা শুরু করলে তাদের লক্ষণগুলো কমে যায় এবং স্বাভাবিক বাচ্চাদের মতোই বেড়ে ওঠে।
চিকিৎসা:
যদি রোগটি শনাক্ত হয়, তাহলে শিশু হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। লোভাথাইরক্সিন নামক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়, যা বাচ্চার ওজন ও বয়সভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়। তারপর নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে ডোজ ঠিক করা হয়। অন্যদিকে জন্মগত থাইরয়েডের বাচ্চাদের যদি জন্মের পরপরই রোগ শনাক্ত করা যায় এবং তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করা যায়, তাহলে তারা স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে ওঠে। তাই যাদের থাইরয়েড রোগের পারিবারিক ইতিহাস আছে তাদের বাচ্চাদের অবশ্যই জন্মের পর থাইরয়েড আছে কি না পরীক্ষা করতে হবে।
যেহেতু এটি সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ, তাই যথাসময়ে বাচ্চাদের থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে এবং নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। বাচ্চা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেহেতু ওষুধের ডোজ পরিবর্তন করতে হয়, তাই নিয়মিত শিশু হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞের (পেডিয়াট্রিক এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট) শরণাপন্ন হতে হবে।
পরামর্শ দিয়েছেন:
ডা. মো. মাজহারুল হক তানিম
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা